‘৩৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃত কোনো নির্বাচন হয়নি’

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সরকার নির্বাচনকে ভয় পায়, তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত ৩৪ বছরে প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 
গতকাল রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বাসদের সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বামপন্থিদের ভূমিকা এবং করণীয়’ শীর্ষক এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে তফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া হলে।


সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন থেকে শুরু হয়েছে, তখন থেকেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো এবং সেই ছাত্র সংসদের অনুষ্ঠানে বির্তকে উপাচার্য পর্যন্ত অংশ নিতেন। একই সঙ্গে সেখানে বক্তৃতা হতো, সাংস্কৃতিক চর্চা হতো। এমনকি আইয়ুব খানের সময়ও ছাত্রসংসদের নির্বাচন হয়েছে, ছাত্রসংসদ জীবন্ত ছিলো। পরবর্তীতে বাংলাদেশে সামরিক শাসন এসেছে তখনো ছাত্রসংসদ ছিলো। কিন্তু এরশাদের শাসন আমলের পর থেকে প্রায় ৩৪ বছর চলে গেলো, কোনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন হলো না, প্রকৃত কোনো নির্বাচনও হলো না।  তাতে বোঝা যায় যে, শাসক শ্রেণি প্রকৃত কোনো নির্বাচনকে কতো ভয় পায়। তারা মনে করে সেই যে, আইয়ুব খান ও ইস্কান্দার মির্জা যে ভয় পেয়েছিলেন, নির্বাচন হলে বামপন্থিরা চলে আসবে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিলো, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিলো, তেমনিভাবে বামপন্থিদের একটা যুক্তফ্রন্ট গঠন করে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হবে। তারাই তখন শক্তিশালী হয়ে উঠবে, যে ছাত্ররা এখন বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছেন, যারা পথের সন্ধান পাচ্ছে না, তারা সুপথের সন্ধান পাবেন। এরপর পরবর্তী নির্বাচনে দেখা যাবে বামপন্থিরাই প্রধান শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ সময় বর্ষীয়ান এই বাম নেতা আরো বলেন, সব সংগ্রামের পর বামপন্থিরা ক্ষমতা দখল করতে পারে না। তারা আন্দোলনে থাকেন ঠিকই কিন্তু, ক্ষমতা দখল করেন বুর্জোয়ারা। বামপন্থিদের বিভাজনে সব সময় ক্ষমতা দখল করেন বুর্জোয়ারা। ‘বানর মানুষের পোশাক পরলে তো মানুষ হয়ে যায় না’। একটা চরম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে, সেটা যদি নির্বাচনের মাধ্যমে হতো, তাহলে তাদেরকে পলায়ন করতে হতো না।

অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খালেকুজ্জামান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মাদ, প্রথম আলোর যুগ্ন সম্পাদক সোহরাব হাসান, নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভা প্রধান ছিলেন আবু সাঈদ খান।

আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জনমত তৈরির ক্ষেত্রে বামপন্থিদের ব্যাপক ভূমিকা ছিলো। ছাত্রদের সংগ্রাম পরিষদের মতো অনেক সংগ্রামে বামপন্থিদের অবদান আছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা হলো বাম আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু বর্তমানে স্বৈরাচারী আচরণ করছেন সবাই। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দেয়াল লিখনের মধ্যে রয়েছে, এ দেশ সবার। সে লেখার ভাবার্থ সরকারের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না। দেয়ালের ভাষার অর্থ সরকারকে বুঝতে হবে। 

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমরা ইউনিটি ও ইউমিনিটি শব্দ দুটিকে এক ভেবে আমরা ভুল করে ফেলি। আমি যখন ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় তখন আইয়ুবি শাসন আমল চলছে। তখন অনেকগুলো আন্দোলন চলছে। এগুলোর মধ্যে বামপন্থি ধারাটা খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 

আওয়ামী লীগের ভেতরে যারা কাজ করেছেন তারাও সাংগঠনিকভাবে কমিউনিস্ট ছিলো। ছয়দফা সম্পর্কে দুই ধরনের মূল্যায়ন। ছয়দফার ভিত্তিতে গণঅভ্যুত্থান হয়নি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছে ১১ দফা নিয়ে। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারের আন্দোলনেও ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু পরিচিত কেউ ছিলেন না। এবারের আন্দোলন ৬৯-কেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। এটা গণঅভ্যুত্থান, এটা বিপ্লব না। এই কথাটা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

তিনি বলেন, তবে আন্দোলনে এবারে একটা জায়গায় ঘাটতি ছিলো ৬৯- এর আন্দোলনের থেকে। সেটা হলো, বড় অংশ শ্রমিক ছিলেন না। তিনি বলেন, সরকার ফেলে দিলেই বিপ্লব হয় না। বিপ্লব হলো, সমস্ত কাঠামো চুরমার করে দিয়ে গড়তে হবে।

‘বারবার দরকার আওয়ামী লীগের সরকার’- এই বাক্যটাই ফ্যাসিবাদী। আমরা বিশ্বাস করতাম, বারুদের বাক্স এক সময় জ্বলবেই, সেটা এবার কোটা নিয়ে হয়েছে। কোটা জনপ্রিয় হওয়ার একটা কারণ হলো, আমাদের দেশের বেকারত্ব।

আমাদের প্রথম করণীয় হলো, নিরপেক্ষ নির্বাচন। তবে এ সরকার আসল কাজগুলো করে না। আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিকে নজর নেই, জিনিসপত্রের দাম কমে না, বন্ধ কলকারখানা চালু হচ্ছে না। আপনি যদি ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে যান, সেটাই হবে আসল কাজ। তিনি বলেন, জমি বর্গা দেয়া যায়, স্বার্থ বর্গা দেয়া যায় না।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশে পরিবর্তন আনা দরকার। তিনি বলেন, হেলমেট বাহিনীর কর্তৃত্ব রাখার জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্বাচন দেয় না সরকার।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035319328308105