“মাদরাসা শিক্ষা বিরোধী ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন |

১৪ জানুয়ারি ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত জমিয়াতুল মোদার্রেছীন এর সভাপতি ও মহাসচিবের বিবৃতিতে মাদ্রাসায় কর্মরত জেনারেল শিক্ষকদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করায়, বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি জহির উদ্দিন হাওলাদর ও মহাসচিব মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেন। 

তাঁদের বিবৃতিতে জমিয়তের নেতৃদ্বয় বলেছেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা বি.সি.এস-এর মাধ্যমে সরকারী চাকরী পায়। হ্যাঁ এটা আমরাও স্বীকার করি। কিন্তু উনারা নিশ্চয়ই জানেন বি.সি.এস-এ আরবি বিষয় থেকে কোন প্রশ্ন হয় না। বি.সি.এস-এ বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, বিজ্ঞান ও সাধারন জ্ঞান থেকে প্রশ্ন হয়। আর এই বিষয়গুলো মাদ্রাসায় জেনারেল শিক্ষকরা পাঠদান করেন। তাহলে মাদ্রাসার ছাত্রদের বি.সি.এস-এর মাধ্যমে সরকারী চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান জেনারেল শিক্ষকদের, অ্যারাবিক শিক্ষকদের এক্ষেত্রে কোন ভূমিকা নেই। 

জেনারেল শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বিবৃতিতে তারা আরো বলেন-দেশে কর্মসংস্থান না থাকায় কিংবা তারা উপযুক্ত স্থানে নিযুক্ত হতে না পারায় মাদ্রাসায় চাকরী নিয়েছেন। তাদের এই ন্যাঙ্কারজনক মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন হতবাক  হয়েছে। এই মন্তব্যে আমরা মর্মাহত। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অপ্রত্যাশিত। আমরা বিশ্বাস করি কোন শিক্ষক এমন মন্তব্য করতে পারেন না। জমিয়তের সভাপতি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নয় বিধায় এমন মন্তব্য করতে পেরেছেন। সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেন মাদ্রাসা ছাত্ররাও টিকে থাকতে পারে সেজন্য মাদ্রাসা শিক্ষায় জেনারেল সাবজেক্ট অন্তর্ভূক্ত করেছেন। এটা কারও দয়া নয়। তাদের মনে রাখা প্রয়োজন এই জেনারেল বিষয় অন্তর্ভূক্ত না হলে মাদ্রাসা শিক্ষা কোন দিন সমমান পেত না এবং মাদ্রাসার শিক্ষকরা কোন দিন জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় আসতে পারতেন না। 

এছাড়া গ্রন্থাগারিক পদের ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি একদম ভিত্তিহীন। মাদ্রাসায় আরবি বিষয়ের চেয়ে জেনারেল সাবজেক্ট বেশি। আরবি বিষয়ের বই লেন-দেন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আরবি বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন গ্রন্থাগারিক প্রয়োজন হলে, জেনারেল সাবজেক্ট লেন-দেন ও ব্যবস্থাপনার জন্যও একজন জেনারেল বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন গ্রন্থাগারিক প্রয়োজন। তাই  গ্রন্থাগারিক ও  সহঃ গ্রন্থাগারিক পদ দুটিতে সবার সমান সুযোগ উন্মুক্ত রাখা যৌক্তিক হবে।  

নেতৃদ্বয় মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষকদের নিয়োগের দাবীকে অবান্তর বলে মন্তব্য করে নিজেদেরকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। প্রশাসনিক পদে কোন বিষয় বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন নেই বরং প্রশাসনিক কাজে দক্ষ প্রার্থীর প্রশাসনিক পদে নিয়োগ পাওয়া অধিকতর যৌক্তিক। এছাড়া ১৭৮০ সাল থেকে মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদের যে তথ্য দিয়েছেন তাও তাদের মনগড়া এবং পক্ষপাত মূলক। 

আলিয়া মাদ্রাসার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৭৮০ সালে কলকাতায় মাদ্রাসা-ই-আলিয়া প্রতিষ্ঠার পর ১৭৮০ সাল থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ খ্রিষ্টান অফিসারদের একটি বিশেষ টিম মাদ্রাসা তত্ত্বাবধান করতেন। অতঃপর ১৮১৯ সালে পরিচালনা কাঠামোতে কিছুটা পরিবর্তন এনে বিশেষ টিমের পরিবর্তে একজন সেক্রেটারী ও একজন সহকারী সেক্রেটারী নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ১৮৫০ সালে পরিচালনা কাঠামোতো আবারও পরিবর্তন এনে অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি করা হয়। ১৮৫০ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৭৭ বছরে পযার্য়ক্রমে ২৬ জন ব্রিটিশ অফিসার অধ্যক্ষের  দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু ঐ সময়ে মাদ্রাসার স্বকীয়তা নষ্ট হয়নি এবং অনেক মনীষী, আলেম-ওলামা তৈরি হয়েছেন। তাই মাদ্রাসার প্রশাসনিক পদে জেনারেল শিক্ষক নিয়োগ হলে মাদ্রাসার স্বকীয়তা নষ্ট হবে, এই কথা ভিত্তিহীন বরং অ্যারাবিক ও নন অ্যারাবিক শিক্ষকদের সমন্বয়ে মাদ্রাসার প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করতে পারলে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন ও মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মাদ্রাসায় কর্মরত জেনারেল ( নন্ অ্যারাবিক ) শিক্ষকদের একটি অরাজনৈতিক ও অসাম্প্রদায়িক সংগঠন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য জেনারেল শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং মাদ্রাসায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করা। তাই জমিয়তের বিভ্রান্তিকর , ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত তথ্য বিবেচনা না করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন-এর প্রস্তাবনাসমূহ মাদ্রাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর  সংশোধনীতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশে মাদরাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023949146270752