অপপ্রচারের শাস্তির বদলে বই প্রত্যাহার অপ্রত্যাশিত : সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ছড়ানো বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজবের ঘটনা বিচ্ছিন্ন মনে হলেও প্রতিটি ঘটনা সাম্প্রদায়িকতার সুতোয় গাঁথা বলে মনে করছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। সংগঠনটি বলছে, এগুলো অত্যন্ত সু-পরিকল্পিতভাবে সম্প্রীতি ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার অপচেষ্টা। এসব অপপ্রচারের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী কারা তা জানা সত্ত্বেও তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে না। উল্টো অপ্রত্যাশিতভাবেই কোনো আলোচনা ছাড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি বই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক, শিক্ষা পাঠ্যক্রম বিষয়ক অপপ্রচার বন্ধ হোক’ বিষয়ক গোল টেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি পক্ষ থেকে এসব কথা তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হেলেন মনীষা সরকার। এসময় শিক্ষাক্রম নিয়ে ছড়ানো বিভিন্ন অপপ্রচার ও গুজবের ঘটনার অংশবিশেষ উপস্থাপন করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত রেখে নতুন পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুলত্রুটি রয়েছে তা সংশোধন করে দ্রুত পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে।

বৈঠকে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলম। এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, মুখস্ত নির্ভর শিক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে এবার সৃজনশীল চিন্তনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে দুই বছরব্যাপী গবেষণার পর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এই শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়।  শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবারের শিক্ষাক্রমে সমস্যা চিহ্নিত, সমস্যা উত্তরণের উপায়, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা, বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান দেখানো, নিপীড়িত গাষ্ঠীর মানুষকে মর্যাদা দিতে শেখার মতো মানসিক অবস্থা তৈরির জন্য শিক্ষা উপকরণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।

সরকারের প্রতি মৌলবাদী গোষ্ঠীকে কঠোরভাবে দমন করার জোরালো দাবি জানান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, মৌলবাদীদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ্যক্রম পড়ানো বন্ধ করে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাধারণ কারিকুলাম নিয়ে যত কথা হয় মাদরাসার কারিকুলাম নিয়ে কখনো কথা হয় না।

তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ধর্মকে নিজ নিজ জায়গায় থাকতে দিতে হবে। ৫ম থেকে-৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ পাঠ্যক্রম থাকতে হবে।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, আমাদের মাইন্ডসেট এ্যানালিটিক্যাল না। এর ফলে নানা প্রতিবন্ধকতা আসছে। এসময় তিনি দক্ষ ও যুক্তিশীল মনোভাবের জনগোষ্ঠী তৈরি করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও মানবাধিকার শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের জেন্ডার সংবেদনশীল মনোভাব তৈরির জন্য জেন্ডার সমতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাতে বাধা দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ছড়ানো বিদ্বেষকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাস্তবায়নে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে।

বিশিষ্ট কলামিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, শিক্ষা পাঠ্যক্রম নিয়ে বিতর্ক আসলে অজ্ঞানতার মূল দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করে। সমাজ আজ যে অবস্থানে রয়েছে, সেখানে পরিবর্তন নষ্ট করার আয়োজন বন্ধ করতে প্রতিরোধ গুরুত্বপূর্ণ। সনদের স্বীকৃতি দেয়ার আগে সরকারকে কারিকুলাম পর্যালোচনা করতে হবে। ধর্ম শিক্ষাকে একমুখী করতে হবে। খুব শক্তভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনকে লক্ষ্যায়িত করতে হবে।

মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, শিক্ষাক্রম চাহিদার সঙ্গে বিবেচনায় রেখে সর্বদাই পরিবর্তনশীল। সরকারকে নীতিমালা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। দৃঢ়ভাবে সমঝোতার ক্ষেত্রে কতটুকু সমঝোতা করা হবে তার কৌশল সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বিতর্কিতের ইস্যুকে উপেক্ষা করে শিক্ষাক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অতিথিদের আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের দিলিপ সরকার, ব্লাস্টের মাহবুবা আক্তার, বাউসির মাহবুবা বেগম, আইন ও শালিস কেন্দ্রের রাখী জামান।

গোল টেবিল বৈঠকে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের মধ্যে অ্যাকশন এইড, দীপ্ত ফাউন্ডেশন, উইমেন ফর উইমেন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, আইন ও শালিস কেন্দ্র, ঢাকা ওয়াইডব্লিউ সি এ অব বাংলাদেশ, কর্মজীবী নারী, নারী মুক্তি সংস্থা, পল্লীমা মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002810001373291