আইনের জগতে প্রতিভার অভাব দেখা দিচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিচার বিভাগের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মেধাবী বিচারক ও আইনজীবী দরকার। বাংলাদেশে আইন পেশা ক্রান্তিকালের মধ্যে রয়েছে। দক্ষ বিচারক ও আইনজীবীরা অবসরে চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে নবীনদের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আগমন ঘটছে না। ফলে আইনের জগতে প্রতিভাবানের অভাব দেখা দিচ্ছে।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ মন্তব্য করা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে ১১১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

রায়ে আইনজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে বার কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্টদের করণীয় নিয়ে ১২ দফা অভিমত দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। আদালত বলেছেন, আইনজীবী হিসেবে সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে বার কাউন্সিল বয়সসীমা নির্ধারণ করতে পারবে।

সর্বোচ্চ আদালতের এ অভিমতের বিষয়ে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সামনে একটা বড় ইস্যু হলো আইনজীবী হিসেবে বিচারাঙ্গনে প্রবেশের বয়সসীমা ঠিক করা। এ পেশায় যোগ্য ও মেধাবীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই এটা করা দরকার। আদালতে শুনানিকালে আমি বলেছিলাম, আদালত বয়সসীমা ঠিক করে দেবেন। কিন্তু তা দিলেন না। রায়ে বলা হয়েছে, বার কাউন্সিল এটা নির্ধারণ করবে। ’ তিনি বলেন, ‘আইন করার ক্ষমতা সরকারের, বার কাউন্সিলের নয়। বার কাউন্সিল সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে পারে। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে রায় বাস্তবায়নের প্রস্তাব বার কাউন্সিলের বৈঠকে তুলব। ’

মাহবুবে আলম বলেন, বার কাউন্সিল পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যের কমিটি রয়েছে। চেয়ারম্যান ছাড়া বাকি ১৪ জন আইনজীবীদের ভোটে নির্বাচিত। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বয়সসীমা নির্ধারণ করবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার বলেন, ‘কত বছর বয়সে আইনজীবী হতে পারবে, তা নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি মনে করি, বিষয়টি নির্ধারিত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, কত বছর বয়স পর্যন্ত আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিল সনদ দিতে পারবে, তা নির্ধারণ না করে আইন বিষয়ে কত বছর বয়স পর্যন্ত পড়া যাবে, অর্থাৎ আইন বিষয়ে শিক্ষার্থীর বয়স কত হবে (এন্ট্রি পয়েন্ট) সেটা আইন করে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

বাসেত মজুমদার বলেন, ‘আইনজীবীদের বয়সসীমা নির্ধারণের জন্য আদালত একটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তা মাথায় রেখে এ বিষয়ে আইন করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে আইন করা হবে কি না। ’

বার কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধি (ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান) অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনা করা হবে। আদালতের আদেশ, নির্দেশ, পর্যবেক্ষণ কার্যকর করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের সনদ গ্রহণের পরীক্ষায় দুই বছরের সনদ নিয়ে জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে করা এক রিট আবেদনের ওপর দেওয়া রায়ে এলএলবি কোর্স সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরদিন ২৬ জুলাই দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপিল করে। শুনানি শেষে এ আপিল খারিজ করে দেওয়া হয়। এ মামলায় অন্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষভুক্ত হয়ে আবেদন করেছিল, সেসব আবেদনের নিষ্পত্তি করে রায় দেন আপিল বিভাগ।

রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে স্থিতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা ও নতুন নতুন সমস্যা মোকাবেলার জন্য মেধাবী আইনজীবী ও বিচারক প্রয়োজন। তাঁরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন। কিন্তু কিছু আইনজীবী আইন বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে টাকা উপার্জনের দিকে ঝুঁকছেন।

রায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আইনবিষয়ক পাঠ্যসূচি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বার কাউন্সিলকে তাগাদা দেওয়া হয়। বলা হয়, কোনো ব্যক্তি আইনের ওপর মানসম্পন্ন ডিগ্রি অর্জন করছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব বার কাউন্সিলের। দেখা যায়, দুয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনবিষয়ক পাঠদান খুবই নিম্নমানের। বার কাউন্সিল এ শিক্ষার তদারকির জন্য সরকারের অনুমতি নিয়ে নীতিমালা ও সিলেবাস তৈরি করবে। এসব প্রতিপালন করতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে বার কাউন্সিল।

রায়ে বলা হয়, আইন পেশা ব্যবসা নয়। জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা এবং পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব পালন করার জন্যই এ পেশা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004647970199585