সাড়ে আট বছরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন দিতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতারা। তাঁরা সিনেটের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি জানান।
আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের এ জোটের ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন নেতারা। ডাকসুসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তাঁরা ১১ আগস্ট শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-প্রাক্তন ছাত্রনেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সংহতি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।
জোটের অন্তর্ভুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাসদ (খালেকুজ্জামান) সমর্থিত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমর্থিত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ঐক্য ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন। জোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে ৮ আগস্ট অপরাজেয় বাংলায় বিক্ষোভের ঘোষণাও আসে।
লিখিত বক্তব্যে জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ-সমর্থিত ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব বলেন, ‘এবারের সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বেশ জোর দিয়েই ডাকসুসহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কথা বলেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অন্যতম প্রধান কাজ ছিল এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, রাষ্ট্রপতি বলার পরও এ বিষয়ে প্রশাসন ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নিল না। অথচ নিজেদের স্বার্থে প্রায় অর্ধেক সদস্য নির্বাচিত না করে তড়িঘড়ি করে সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করেছে। এটি শুধু অগণতান্ত্রিকই নয়, অনৈতিকও বটে। আমরা এই প্রহসন বাতিল করে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে ছাত্র প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সব প্রতিনিধি নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি।’
দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ও সহশিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকায় ‘শরীরে এবং মননে তারুণ্যের শক্তি আজ মৃতপ্রায়’ বলে মন্তব্য নেতাদের। তাঁরা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির খবর আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। শিক্ষা-গবেষণায়, আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার ধারাবাহিকতা রুদ্ধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে এমন শিক্ষকদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের শিক্ষক হিসেবে আবেদন করার মতোও যোগ্যতা নেই। এর ফলে ডাকসুর দাবিতে ছাত্র সিনেটের সামনে বিক্ষোভ করলে শিক্ষকদের দ্বারা এই ছাত্রছাত্রীদের ওপর চড়াও হওয়া, মারধর করা বা মেয়েদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়।’
প্রশ্নোত্তর পর্ব
বর্তমান সময়ে ডাকসুর দাবিতে আন্দোলনকে কেউ কেউ উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন বলে অভিযোগ করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ। এ আন্দোলন ব্যক্তিগত আরেফিন সিদ্দিকের অপসারণ কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন নয়। তবে ছাত্র জোট মনে করে, ব্যক্তিগতভাবে ডাকসু নির্বাচন দিতে না পারায় আরেফিন সিদ্দিকের ভূমিকা শতভাগ ব্যর্থ। এর আগে উপাচার্যদের অনেকেই নির্বাচন দিতে না পারলেও উদ্যোগ নিয়েছেন, সেখানে সাড়ে আট বছরে আরেফিন সিদ্দিক একটিবারের জন্যও পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
লিটন নন্দী বলেন, ‘আমরা বলছি, সিনেটে ক্রমাগত ছাত্র প্রতিনিধি ফাঁকা রেখে অগণতান্ত্রিক সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অবৈধ। ১০৫ সদস্যের সিনেট পূর্ণাঙ্গ করার পর যে-ই উপাচার্য নির্বাচিত হোন, সেখানে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্য ডাকসু নির্বাচনের জন্য কোনো ভূমিকা পালন করতে না পারায় তিনি ব্যর্থ।
এক সাংবাদিক অভিযোগ করেন, লিটন নন্দীর সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের সঙ্গে এক গোপন বৈঠকের পর উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন করা হচ্ছে। জবাবে লিটন নন্দী বলেন, ‘এটি আমি আপনাকে আগেই ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমার আদালতে হাজিরা ছিল, সেখান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদের নিয়ে মীজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি। আপনার কাছে গোপন বৈঠকের কোনো প্রমাণ আছে? আর তা ছাড়া, একাধিকবার আপনার কাছে বক্তব্য দিয়েছি, তারপরও একই অভিযোগ করছেন, এটি একধরনের হলুদ সাংবাদিকতা।’ ওই সাংবাদিক বলেন, তাঁকে অধ্যাপক মীজানুর রহমান নিজেই বলেছেন, বাম নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন।
তখন বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমর্থিত ছাত্র ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ রানা দাবি করেন, লিটন নন্দী নন, বরং তাঁদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জোটের অংশগ্রহণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের দিন শিক্ষার্থীদের ওপর ‘হামলায়’ জড়িত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ওই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
কিন্তু ওই সাংবাদিককে ‘কেন হলুদ সাংবাদিক বলা হলো’, ‘আপনারা টাকা খেয়ে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন করছেন’—এমন অভিযোগ তুলে টেবিল চাপড়ে সেখান থেকে ওঠে যান।