পড়াশুনার করার অনেক ইচ্ছে কিন্তু উপায় নেই। বাবা বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে খুঁজছেন। রিকশা চালক বাবার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ বহন করার মত সামর্থ নেই। প্রতিবেশীরা প্রায়ই বাবা-মাকে বলছে মেয়ের এত পড়াশুনা করে লাভ কি? তাই এবার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় বুঝি। বিয়ে করতে চাইনা একটু সহযোগিতা পেলে হয়তো পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতাম”। মনের চাপা ক্ষোভ এভাবেই প্রকাশ করেছেন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী মেরিনা সুলতানা।
অল্পের জন্য জিপিয়ে ৫ জোটেনি মেধাবী শিক্ষার্থী মেরিনা সুলতানার। তিনি এবার হাতীবান্ধা এস এস মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বানিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ ৪.৯৬ অর্জন করেন।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমারী ইউনিয়নের উত্তর সিংঙ্গীমারী গ্রামের রিকশা চালক সিরাজুল ইসলাম ও খোতেজা বেগমের মেয়ে মেরিনা।
সিরাজুল ইসলাম (৪০) একমাস আগে ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়ে বগুড়া শেরপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। বর্তমানে কাজকর্ম করতে না পারায় ছেলে মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের অভাব অনটনের সংসার। দিন এনে দিন খান। সংসারের ভরণপোষণ ও দুই ছেলেমেয়ের লেখা পড়ার খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাড়ি ভিটে ৫ শতক জমির উপর একটি মাত্র টিনের কুঁড়েঘর। সেই ঘরেই ঘুমায় সবাই একত্রে। মেরিনার ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।
কুপির আগুনে রাত জেগে পড়াশোনা চালাতেন মেরিনা সুলতানা। প্রাইভেট পড়ার সামর্থ ছিল না। ৪ কিলোমিটার দূরে পায়ে হেঁটে কলেজে যেতেন। ভালো খাবার আর ভালো পোশাক জুটেনি কোন দিন।
ভবিষ্যতে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দুঃখী পিতামাতার মুখে হাসি ফোটাতে চান।
কিন্তু সেই স্বপ্নে একমাত্র বাধাঁ হয়ে আছে আগামী দিনের পড়াশোনার খরচ। তাই বর্তমানে সাফল্যে এলেও ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণে শঙ্কা কাটছে না অদম্য মেধাবী মেরিনা সুলতানার।
মেরিনা সুলতানার মা খোতেজা বেগম বলেন, টাকা পয়সা নেই কি দিয়া মেয়েকে পড়াশুনা করাই। তাই বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে খুঁজছি। যদি কেউ তার পড়াশুনার জন্য সাহায্য করতো তাহলে মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে পড়াশুনা করাতাম।
হাতীবান্ধা এস এস মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম প্রধান জুয়েল বলেন, মেরিনা সুলতানা দরিদ্র হলেও মেধাবী। কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা তাকে সহায়তা করলে তার কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।