উৎসবের জন্য প্রস্তুত ৩৫ কোটি বই

আকতারুজ্জামান |

নতুন বছরের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার প্রায় সব আয়োজনই সম্পন্ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ১ জানুয়ারি উৎসাহ উদ্দীপনায় দেশের স্কুল-মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ইতিমধ্যে প্রায় ৩৫ কোটি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অনেক স্থানে স্কুলে স্কুলেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বই। বাকি প্রায় অর্ধ কোটি বই এ মাসের মধ্যেই পৌঁছে যাবে মাঠ পর্যায়ে। ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে গত বছরের চেয়ে এবার ১০ লাখ ৭০ হাজার ৯৬৬ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে।

আর ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৯টি বই বেশি ছাপানো হয়েছে। প্রাথমিকের সব বই ও নবম, দশম শ্রেণির চারটি বই এ বছর রঙিন করে মুদ্রণ করা হয়েছে। গতকাল এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বই উৎসবের জন্য প্রায় সব বই চলে গেছে মাঠপর্যায়ে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। পরে ১ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকার আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বই উৎসবে অংশ নেবেন। একই দিনে সারা দেশের স্কুলে স্কুলে আয়োজন করা হবে বই উৎসবের। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর মাতুয়াইলে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের ছাপাকাজ পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের চেয়ে এবারের বইয়ে কাগজের মান ভালো। বইগুলো আকর্ষণীয় ও রঙিন করা হয়েছে। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির ১২টি বই এ বছর সুখপাঠ্য করে শিক্ষাবিদদের পরামর্শে সহজ করে ছাপানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ক্রমান্বয়ে সব বই সুখপাঠ্য ও সহজ করা হবে।

অপ্রয়োজনীয় বই বাদ দিয়ে ভবিষ্যতে বইয়ের সংখ্যা কমানো হবে বলে আশ্বাস দেন শিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের ফলে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরাও স্কুলে আসছে। মন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছরের মতো এবারও বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে নতুন বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। বিনামূল্যে বই দেওয়ায় যারা আগে স্কুলে যেত না তারাও স্কুলে আসছে। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হারও বেড়েছে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, প্রাথমিকের বিভিন্ন শ্রেণির ৯৯ শতাংশের বেশি বই উপজেলায় পৌঁছে গেছে। আর নবম-দশম শ্রেণির অর্ধকোটি বই বাদে মাধ্যমিকের সব বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বাকি বইগুলোও পৌঁছে যাবে এ মাসের মধ্যেই। জানা গেছে, মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে নতুন বই পরিবহন করা ৫৬টি ট্রাক পাঁচ দিন আটকে ছিল। পরে তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। বই ছাপা কাজের শেষ পর্যায়ে কয়েকটি ছাপাখানা নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করে বই সরবরাহ করছে। জানা যায়, প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ পাওয়া গ্লোবাল প্রিন্টার্স রাতের গভীরে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা করছিল।

অভিযোগ পেয়ে এনসিটিবির সদস্য অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী প্রতিষ্ঠানটির গোডাউনে গিয়ে সম্প্রতি এক লাখ ২০ হাজার বই কেটে দেন। পরে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এসব বই পুনরায় ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিবি। সূত্র জানায়, ছাপা কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো কোন মানের বই সরবরাহ করছে তা দেখভাল করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) টিম কাজ করছে। উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা বইয়ের মান যাচাই করছে তারা। ছেঁড়া-ফাটাসহ অন্য সমস্যা পেলে তা স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিবর্তন করতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। যদি ছাপা কাজে বেশি সমস্যা পাওয়া যায়, নিম্নমানের অভিযোগ আসে তবে অর্থদণ্ড করা হবে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে এনসিটিবির টিম ওই ছাপা প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাক লিস্টেড করবে।

 

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027279853820801