আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) গত সোমবার নীতিনির্ধারণী বৈঠকও হয়েছে। আগামী বছর থেকেই যাতে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া যায়, সেজন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিও গঠন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একক ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়া এখনো নিশ্চিত নয় বড় চার বিশ্ববিদ্যালয়ের। চলতি বছর যেহেতু নিজস্ব পদ্ধতিতেই এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নেবে, তাই একক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হলে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখা হবে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, শিক্ষার্থীর আর্থিক সাশ্রয়, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার ভোগান্তি কমানোসহ ভর্তি প্রক্রিয়াকে সহজ করতে ‘গুচ্ছভর্তি’ প্রক্রিয়ার আবির্ভাব হয়। কিন্তু সেই গুচ্ছই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়ায়। চারটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভুক্ত না হওয়ায় প্রথমেই গ্রহণযোগ্যতা হারায় এ পদ্ধতি।
গত সোমবার ইউজিসিতে আয়োজিত নীতিনির্ধারণী সভা শেষে জানানো হয়, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি হবে। কমিটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতির সুপারিশ করবে। তার ওপর ভিত্তি করে একক ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে এ কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে সভায় বড় চার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটিই ছিল অনুপস্থিত। কী কারণে তারা সবাই অনুপস্থিত ছিল, সেটি জানা যায়নি। তবে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের এ আলোচনায় আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।
সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ ও একক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, আমাদের ওই সভায় থাকতে বলা হয়নি। তাই এ নিয়ে আমরা আর কী বলব! দেখি, তারা কী সিদ্ধান্ত নেন, তারপর এ বিষয়ে কথা বলব।
ইউজিসির সভার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেও। বিষয়টি জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা জেনেছি রাজধানীভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ওই সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তেয়াত্তরের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আপনারা এই একক ভর্তি পরীক্ষায় যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে চাননি।
ইউজিসির সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ থাকলেও জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একক ভর্তি পরীক্ষায় যাওয়ার বিষয়ে তারাও এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, জাতীয় প্রয়োজনে আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে মূল বিষয়টি হলো অর্থ, সময় ও ভোগান্তি লাঘব করা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো সুষ্ঠু, সুন্দর একটি কাঠামো তৈরি করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব এবং স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। তবু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, তবে সেটা সময়ের ব্যাপার।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি প্রত্যেকবারই কল কেটে দিয়েছেন।
তবে বড় চার বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতির বাইরে থাকলে জগন্নাথও এতে অংশ নেবে না বলে জানা গেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একক ভর্তি পরীক্ষায় এলে আমরাও এতে অংশ নেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে জবি শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্যের আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একক ভর্তি পরীক্ষায় এলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও এ পদ্ধতিতে আসবে। অন্যথায় তারা নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় মনোযোগী হবে।