এমপিও শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট নিয়ে কিছু কথা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |
mujjam sir
অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী

জুলাই মাসের এমপিও সভা অনুষ্ঠিত হবার আগের দিন অর্থাৎ ২০ জুলাই তারিখে ‘প্রথম এজেন্ডা হোক এমপিও শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে, লেখাটি সময়মতো দেশের আপামর শিক্ষক-কর্মচারীর প্রিয় পত্রিকা ‘দৈনিক শিক্ষার’ হাতে পৌঁছুতে পারেনি। সেটি ২১ জুলাই তারিখে সন্ধ্যের পর দৈনিক শিক্ষায় পৌঁছে। দৈনিক শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ঈষৎ পরিবর্তিত আকারে হলেও লেখাটি পরদিন প্রকাশ করে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্টের প্রাণের দাবিটি তুলে ধরে। এ জন্য দৈনিকশিক্ষা পরিবারকে অনন্ত কৃতজ্ঞতা জানাতেই হয়।

একটা প্রচ্ছন্ন বিশ্বাস ছিল যে, উক্ত সভায় ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে এবং নিশ্চিত ভাবে সেটি জুলাই থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু, মনে হয় ইচ্ছা করেই কেউ এ সভায় তা নিয়ে টু-শব্দটি ও করেনি।

অবহেলা আর প্রবঞ্চনা এ দেশের এমপিও শিক্ষকদের নিত্য সাথী। তাঁরা আজ বেতন স্কেলের যে শত ভাগ পাচ্ছেন, তা কিন্তু এমনিতেই হয়ে যায়নি। তাঁদের পূর্বসূরীদের কতো আত্মত্যাগ ও আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁরা আজকের এ অবস্থানে এসে পৌঁছুতে পেরেছেন, তা তাঁদের ক’জনে জানেন?

এ নিয়ে কতো মিথ্যে প্রচারণা! তাঁরা পান শত ভাগ বেতন স্কেল আর বলা হয় শত ভাগ বেতন। গাঁও-গেরামের সাধারণ মানুষ জানে যে, এমপিও শিক্ষকদের সরকার শত ভাগ বেতন দিয়ে থাকে। তাহলে, তাঁদের আবার কীসের অভাব-অনটন?

এমপিও শিক্ষকদের রাজকপালই বটে। জনগণ জেনেছেন যে, তাঁদের বাড়ি ভাড়া পাঁচ গুণ আর চিকিৎসা ভাতা তিন গুণ অনেক আগেই বেড়েছে। এবার তারা জানবেন যে, পাঁচগুণ থেকে দশগুণ আর তিনগুণ থেকে পাঁচগুণ হচ্ছে। সত্যি- ‘সেলুকাস,কী বিচিত্র এ দেশ!’

পাঁচশ’ টাকার বাড়ি ভাড়া এক হাজার টাকা আর তিনশ’ টাকার চিকিৎসা ভাতা পাঁচশ’ টাকা করা হচ্ছে। অপমান আর অবহেলার তিলক চিহ্নটি আরেকটু বেড়ে গেলো না? আজকাল একজন রিক্সা ড্রাইভার ও যে বাড়িতে থাকে, সেটির ভাড়া দু’ থেকে তিন হাজার টাকার কম নয় এবং পাঁচশ’ টাকা দিয়ে তো কেউ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাটুকু ও চালিয়ে নিতে পারে না। এক হাজার টাকায় কোনো বস্তিতে ও ঘর ভাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কী হবে তিন’শকে পাঁচ’শ আর পাঁচ’শকে একহাজার করে?

এমপিও শিক্ষকগণ ভেবেছিলেন, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের নির্দেশনা অনুসারে জুলাই মাসেই তাঁরা ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হবেন। কিন্তু তাঁরা আবারও প্রবঞ্চনার শিকার হবার আলামত দেখতে পাচ্ছেন। জুলাই মাসের বেতন বিলের খবরে ইনক্রিমেন্টের কোনো ঈঙ্গিত না পেয়ে তাঁরা চরম হতাশ ও ক্ষুব্ধ। জাতীয় বেতন স্কেলের নির্দেশনা অমান্য করা মানে জাতীয় প্রতারণা নয় কী?

এমপিও শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্টের বিষয়টি তাহলে আবার অমীমাংসিত রয়ে গেল? বৈশাখি ভাতা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শত ভাগ বোনাসের দাবিটি ও কেউ আমলে নিচ্ছে না। পাঁচগুণ (?) দশগুণ (?)’র প্রজ্ঞাপনে আবারো ‘অনুদান- সহায়তা’! এমপিও শিক্ষকদের নিয়ে একটার পর একটা-এ সব কী হচ্ছে?

সেই কবে জানি অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীগণ একটি ইনক্রিমেন্ট নিজেদের কপালে জুটিয়ে নিয়েছিলেন। পরবর্তিতে সেটি দুষ্পরিবর্তনীয় হয়ে ও খোঁড়ারুপে তবু টিকে ছিল। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের নির্দেশনার আলোকে সেটি বাদ পড়েছে। কেউ তাতে আপত্তি করেনি। যথা নিয়মে সঙ্গত ভাবে জাতীয় বেতন স্কেলের নির্দেশনামত এ জুলাই থেকে সেটি সংযুক্ত হবার কথা। কিন্তু আলামত যে ভিন্ন দেখাচ্ছে। তাহলে কী ধাক্কা মেরে এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন-সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে না? অনেক ক’টি দাবী তাঁদের। কেবল যৌক্তিক নয়, ন্যায়সঙ্গত ও বটে।

বৈশাখি ভাতা, শতভাগ বোনাস এবং সর্বোপরি ইনক্রিমেন্টের জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীগণকে যেন জাতীয় প্রেস ক্লাব, কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার কিংবা রাজপথমূখি হতে না হয়- সে আমরা চাই। কিন্তু অতীত ইতিহাস বলে দেয়, সে বন্ধুর পথেই তাঁরা এ পর্যন্ত এসেছেন।

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022060871124268