করোনায় পাবলিক পরীক্ষায় ছাড় নয়

মো: আবু জামিল সেলিম |

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ১৭ মার্চ থেকে থেকে বাংলাদেশের  সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এবং ৩০ মে পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল মাননীয় প‍্রধান মন্ত্রী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আভাস দিয়ে বললেন, ‘যদি করোনার প্রকোপ অব্যাহত থাকে তাহলে সেপ্টেম্বর মাসের আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না।’  

একজন শিক্ষক  হিসেবে আমি  আমার ভাবনাগুলো দৈনিক শিক্ষার পাঠকের জন্য তুলে ধরছি। প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি সারাদেশে প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন বই সব ছাত্রছাত্রীদর হাতে তুলে দিচ্ছে সরকার। দেখা গেছে জানুয়ারির  ১৫ তারিখ  পর্যন্ত  স্কুলগুলোতে পুরুদমে ক্লাস হয়না। উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের হাতে এখনো সরকার  নতুন বই দেয়ার প্রচলন চালু করেনি। তাদের শিক্ষা বছরের সেশনও ভিন্ন। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত স্কুলগুলোতে দুই বা চার পিরিয়ড  হয়।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই সময়ে বার্ষিক ক্রীড়ার ট্রায়ালসহ খেলাধুলার  ফাইনাল কাজটি শেষ করে ফেলে। পুরস্কার বিতরণের কাজটি অনুষ্ঠানের  মাধ্যমে  পরে করে থাকে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত  ছাত্রছাত্রীরা  পড়াশোনায় মনোযোগ  দিতে পারে না। মার্চের মাঝামাঝি  বন্ধ  হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা নতুন ক্লাশের পড়াগুলো আয়ত্তে করতে পারেনি। শিক্ষকরাও ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদেরকে পড়াগুলো ভালোকরে বুঝাতে পারেনি সময়ের স্বল্পতার কারনে।

কোনো কোনো স্কুলে ক্লাস টেস্ট চলছিল। আবার কোনো কোনো স্কুলে ক্লাস টেস্ট সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এই হলো আমাদের স্কুলগুলোর পড়াশুনার সার্বিক চিত্র। উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থীরা পাবলিক  পরীক্ষা  দেয়ার জন‍্য তৈরি  হয়ে প্রবেশপত্র নেয়ার জন‍্য অপেক্ষা করছিল। কলেজগুলো পরিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান করার জন‍্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে সব আয়োজন ভেস্তে গেছে। এখন সব জায়গায় অনিশ্চয়তা। শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত  হয়ে যাচ্ছে। তাদের মনোজগতেও সমস‍্যা দেখা দিচ্ছে। শিক্ষকরাও এই সময়ে ক্লাস নিতে পারছেনা। অবসর সময় কাটাতে  কাটাতে হাপিয়ে উঠেছে। সবচেয়ে সমস্যায় আছে অভিভাবকেরা। তারা বাচ্চাদের  পড়াশুনা ছাড়া সময় কাটতে দেখে চরম উৎকন্ঠায় আছেন। সবাই মনে করছিল ঈদুল ফিতরের পরে স্কুল খুলে দেবে। এখন অভিভাকরা কিংকর্তব‍্যবিমুর। তারা স্তম্ভিত। আসলে কারো কিছু  করার নেই। এখন পর্যন্ত  আমাদের দেশে  করোনা আক্রান্ত  রোগীর সংখ্যা  সহনীয় পর্যায়ে আছে। যদিও সংখ‍্যা দ্রুত বাড়ছে। মাননীয় প্রথান মন্ত্রী সেপ্টেম্বর  পর্যন্ত বন্ধের যে ঘোষণা  দিয়েছেন। যদি এর পরিস্থিতি  একটু ভালো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার আগে খুলে দিতে পারে।

এইচএসসি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সারাজীবনের জন্য একটি নির্ণয়ক এই পরীক্ষার ফল ও পরীক্ষার মান। তাই দেরিতে হলেও পাবলিক  পরীক্ষাগুলো নিতে হবে। বিদ‍্যালয়ের শ্রেণির পরীক্ষা  না নিয়েও অটো প্রমোশন দিয়ে উচ্চতর ক্লাসে উঠোনো সম্ভব। কিন্তু বোর্ড পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ সুযোগ নেই। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের  পরে অটো প্রমোশন দিয়ে উপরের ক্লাসে উঠিয়ে  দিয়েছিল। কিন্তু বোর্ড  পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা সম্ভব না। পরীক্ষা নিতেই হবে। ১৯৭২ সালের এইচ এস  সি পরীক্ষার ব‍্যাপারটা আমরা সবাই জানি। ক্লাস সেভেন এইট পর্যন্ত  পড়াশুনা করেছে তারাও  মেট্রিক পরীক্ষার ফরম পূরণ  করে।বই দেখে লিখে নকল করে এসএসসি পাস করেছিল। আমরা ৭২ সালের পরীক্ষার  মতো বোর্ড  পরীক্ষা চাইনা। এই পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষক সমাজের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।ছাত্রছাত্রীদেরক‍ে আমরা বিভিন্নভাবে পড়াশোনায় সহযোগিতা  করতে পারি।অনেক শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষকরা অন লাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। যাদের অনলাইন সুবিধা নেই তারা মেসেঞ্জারের মাধ‍্যমে ব‍্যক্তিগতভাবে অথবা গ্রুপ আকারে আমরা পাঠ দান করতে পারি। ব‍্যক্তিগতভাবে কোন ছাত্রছাত্রী পাঠ না বুঝলে সেল ফোনের মাধ্যমে  তার পাঠটা বুঝিয়ে দিতে পারি।

মো: আবু জামিল সেলিম, সহকারী অধ্যাপক, এ কে হাইস্কুল এন্ড কলেজ, দনিয়া, ঢাকা। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002161979675293