কাজের প্রলোভন দেখিয়ে অসচ্ছল শিশু-কিশোরীদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় গোপন আস্তনায়। এরপর তাদের বিক্রি করে দেয়া হতো পতিতালয়ে। সেখানে বাধ্য করা হতো দেহ ব্যবসায়। চক্রের ফাঁদে পড়া এমন একজন কিশোরী পালিয়ে গিয়ে অভিযোগ করেছে পুলিশের কাছে। অভিযোগ পেয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ৮ ঘন্টার মধ্যেই চক্রের গোপন আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। এসময় সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় জিম্মিদশায় থাকা আরো দুই শিশুকে। সেইসঙ্গে চক্রের দুই সদস্য খদ্দেরসহ আটক করা হয়েছে চারজনকে।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল নগরীর আগরপুর রোড সরকারি মহিলা কলেজের পাশে প্যাদাপড়া হাবিব ভবনের দ্বিতীয় তলায়। দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রপলিটন কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমানুল্লাহ্ আল বারী।
তিনি জানান, নির্যাতিত এক কিশোরীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে আরো দুই শিশুকে উদ্ধারসহ চারজনকে আটক করে। আটকদের মধ্যে দুজন স্বামী-স্ত্রী দালাল এবং দুজন খদ্দের। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নির্যাতিত ওই কিশোরী জানায়, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় তার বাড়ি। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে একই এলাকার প্রতিবেশী ইব্রাহিম, বকুল ও তার মেয়ে মানছুরা বরিশালে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখায়। এমনকি তারা গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাসে করে বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে নিয়ে আসেন। সেখানে আসার পরে কিশোরীর চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তুলে গোপন আস্তানায় নিয়ে আটকে রাখে।
ওই কিশোরী জানান, গ্রামের বকুল নামের সেই নারী আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে তা বুঝতে পারি যখন আমাকে ফ্ল্যাটে নিয়ে মারধর করে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি আমার চেয়েও বয়সে ছোট ৫-৬ জন শিশু-কিশোরী আছে। তাদেরও এভাবে জিম্মি করে এনে খারাপ ব্যবসা করাচ্ছে। আমাকে যিনি কিনেছে তার নাম কালাম এবং তিনি ওই আস্তনা চালান। তার কথা না শুনলে মারধর এবং ধর্ষণ চালাতো সে। শাস্তি হিসেবে যৌন সর্ম্পকের সময়ে অমানবিক কষ্ট দিতো। হত্যার হুমকিও দিত কালাম ও তার স্ত্রী।
নির্যাতিত ওই কিশোরী বলেন, আমার মা গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় মেম্বার ও প্রতিবেশী সেই নারীকে চাপ সৃষ্টি করলে বরিশালের আস্তনা থেকে একদিন ভোর রাতে আমার চোখ বেঁধে মারধর করে গাড়িতে তুলে দেয়। মারধরের সময়ে আমার তলপেটে একাধিকবার লাথি মেরে নির্যাতন চালায় কালাম। ২২ ফেব্রুয়ারি আমি তালতলি গ্রামের বাড়িতে যাই।
কিশোরীর মা বলেন, আমার মেয়েকে কাজ দেয়ার কথা বলে আটকে ধর্ষণ, মারধর করা হত। বাইরের লোকদের কাছে রাতযাপনের জন্য বাধ্য করা হত। এসব কথাই সে গিয়ে আমাকে বলায় আমি থানায় গেলে তারা এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে মারামারির মামলা নেয়। পরে আমি মঙ্গলবার বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় গেলে তারা আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই আস্তনা খুঁজে বের করে আসামিদের গ্রেফতার করেন।
কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আমানুল্লাহ্ আল বারী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা মোবাইল ট্র্যাকিং করে অভিযুক্তদের অবস্থান নিশ্চিত হই। এরপর অভিযান করে ফ্ল্যাট থেকে জিম্মিদশা থেকে আর দুই শিশুকে উদ্ধার করি। সেখান থেকে দালাল কালাম ও তার স্ত্রীকে আটক করি। যেই বাড়িটি আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হতো সেই বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা করতো তারা। বাড়ির মালিকের নাম হাবিব। সেখানে কালামের ছেলেও থাকতো। তবে ছেলেকে পাওয়া যায়নি। চক্রের অন্য সদস্যদের আটক এবং আরও যারা জিম্মি আছে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।