হলের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। আন্দোলনের তৃতীয় দফায় ধর্মঘট পালনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যাতে প্রায় ১০ জনের অধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পাল্টা ছাত্রলীগও অভিযোগ করেছে, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদলের কর্মীরা হামলা করেছে।
বিভাজনের অংশ হিসেবে রোববার (২৮ আগস্ট) ধর্মঘটের শুরুতেই রাজন, অনিমেষ রায়, ফারহান তামিজ নামে তিন শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। এদের মধ্যে ফারহানকে পেটানো হয়েছে শিবির আখ্যা দিয়ে।
ঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘট পালনে সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচে জমায়েত হতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিভিন্ন বিভাগের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাঁখারী বাজার এলাকায় অবস্থান নিতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এফএম শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলকারীদের বাধা দেন এবং ছাত্রলীগের অধীনে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের সকল কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দেন।
শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, নির্দেশনা না মেনে তারা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বললে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তাদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কিল-ঘুষি ও লাথি মারার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়েও হামলা চালানো হয়। এরপর নতুন ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রাজনকে। এছাড়া শিবির আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয় শিক্ষার্থী ফারহানকে।
অন্যদিকে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য একাত্তরের ঘাতক রাজাকারের দোষররা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বিতর্কিত করতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আমরা তাদের প্রতিহত করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একটাই দাবি। আমরা হল চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত এ দাবি আদায় না হবে, আন্দালন চলবে। হামলাকারীদের একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে ২৭ এর ৪ ধারা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। পুলিশের লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জানান, পুলিশ কাউকে আটক করেছে বলে আমার জানা নেই।
এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের হলের আন্দোলন সম্পূর্ণ যৌক্তিক। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হল থাকবে না তা তো হতে পারে না। কিন্তু এ আন্দোলন একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে এবং শান্তিপূর্ণ হতে হবে। জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনো কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের তাঁতিবাজার এবং পল্টন মোড় অবরোধের দিন সাধারণ জনগণের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। এ ব্যাপারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অসংখ্য অভিযোগ আসে। আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করবো যেন তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে থেকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন।
শিক্ষার্থীদের একাংশের দাবি, কয়েক দিনের আন্দোলনে জবি ছাত্রলীগকে তেমন ফ্লোর না দেওয়ায় কয়েকজনের ওপর চড়াও হয়েছেন তারা।
জবি ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি মানোয়ার হোসেন আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে এভাবে কোনো ছাত্র সংগঠনের হামলার ঘটনা ন্যাক্কারজনক।