জাতীয়করণ: ১৪ লাখ শিক্ষার্থী জিম্মিকরণ ও শিক্ষা সমিতির সভাপতির কষ্টকথা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আইকে সেলিম উল্ল্যাহ খোন্দকারের ফেসবুকে দেয়া একটি সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসে আত্তীকরণ  বিধিমালা -২০০০ বাতিলের আন্দোলনের নামে কলেজ জাতীয়করণ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার বিরোধীতা ও সরকারি কলেজের ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে পরীক্ষা, ক্লাস বাতিলের নেপথ্যের নানা তথ্য ‍উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, ২০০০ খ্রিস্টাব্দে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ শুরু করলে বি সি এস সাধারণ সমিতি আন্দোলন শুরু করে। জাতীয়কৃত শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্তির বিষয়ে সমিতির দাবি মেনে আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ফের শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়েই সেই ২০০০ বিধি বাতিলের দাবীতে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন ও মামলায় লিপ্ত হয় বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। এবারে শেখ হাসিনা চেয়েছেন সরকারি কলেজবিহীন উপজেলা সদরে একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করতে। সব কাজ শেষ হলেও সমিতির বিরোধীতায় ২৮৩ কলেজ জাতীয়করণের প্রজ্ঞাপন আটকে রয়েছে। গত দুই বছরের বেশি সময় যাবত তারা জাতীয়করণের বিরোধীতা করে আসছেন। যদিও তারা ব্যানারে লিখছেন ক্যাডারভুক্তির বিরোধীতা। এসব করে কেউ কেউ নেতা বনে যেতে চাইছেন। বিতর্কিত ও জামাত-বিএনপিপন্থীদের কেউ কেউ রাজনৈতিক সাফল্য দেখাতে চাইছেন। কিন্তু সমিতির সভাপতির ফেসবুক স্ট্যাটাস ও তার ব্যাখ্যায় অনেককিছু খোলাসা হয়েছে।

সমিতির বর্তমান সভাপতি ১২ই জানুয়ারি তাঁর ফেসবুকে দেয়া একটা স্টাটাসের বরাতে সমিতিরিই আরেক সদস্য Mushfiqur Rahman Rasel লেখেন:

“প্রসংগঃ সমিতির সভাপতি মহোদয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাস
……………………………….
অাজ ১২ জানুয়ারী,২০১৮ তারিখে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি মহোদয়ের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানলামঃ
১। ২২ নভেম্বর,২০১৭ তারিখে টেলিফোন করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় মহাসচিব মহোদয়কে যে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দিয়েছিলেন, সভাপতি মহোদয় তা জানতেন না। মেসেজটি হলো, জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের ক্যাডার বহির্ভূত রাখার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
২। ৬, ৭ ও ৮ জানুয়ারির কর্মবিরতি স্থগিত করার ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি।
৩। সভাপতিকে না জানিয়ে রিট করা হয়।
৪। রিট শুনানীর তারিখ ৫ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ২ ডিসেম্বর সভাপতি মামলা নিয়ে অালোচনার জন্য বসতে চাইলেন। শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সভাপতির কথা শুনলেন না।
৫। ৬, ৭, ৮ জানুয়ারি কর্মবিরতির ব্যাপারে, মাগুরা পরিস্থিতি ও ডেমোদের ব্যাপারে সভাপতি বসতে চাইলেও নেতৃবৃন্দ সভাপতির কথা শুনলেন না।
……
বর্তমান সমিতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই অামরা দেখেছি, স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে নির্বাচিত সমিতির সভাপতির সাথে অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের ক্রমশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যদিও সমিতির নেতৃবৃন্দ তা স্বীকার করতে চায় না বা তা গোপন রাখতে চায়। সভাপতির সাথে শীর্ষস্থানীয় কতিপয় নেতৃবৃন্দের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব যে এখন চরম অাকার ধারণ করেছে, অাজ সভাপতি মহোদয়ের স্ট্যাটাস দেখে তা সহজেই অনুমেয়।
…….
এখন সভাপতি মহোদয় কী করবেন? শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ তো ওনার কথা শুনছেন না। এবং এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, ওনাকে সভাপতি হিসেবেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এসব অামরা অনেক অাগেই বুঝতে পেরেছি। মর্যাদা রক্ষা কমিটির বিরুদ্ধে ইস্যুকৃত চিঠিতে সভাপতির স্বাক্ষর স্ক্যান করা নিয়ে যে নাটক হয়েছিল, তা অামাদের মনে অাছে।
সভাপতিকে নিজের মত করে কাজ করতে দিচ্ছেন না অথবা, সভাপতির সাথে মন ও মতের মিল না হওয়ায় শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ সভাপতির পরামর্শ গ্রহণ করছেন না।
এমতাবস্থায়, সভাপতি মহোদয়ের কী করণীয়, তা মামুন স্যার তাঁর মন্তব্যে প্রকাশ করেছেন। মামুন স্যারের সাথে অামিও একমত।
এভাবে একটি বিশাল ক্যাডারের সমিতি চলতে পারে না। সমিতির সদস্যদের অাস্থা অর্জনে এ সমিতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। গত দেড় বছরে উল্লেখ করার মত কোন কিছু সমিতি দেখাতে পারেনি। তার প্রধান কারণ ইগো এবং সভাপতির সাথে বিরোধ।
তাই ক্যাডারের এ ক্রান্তিকালে অামি মনে করি,
১। সভাপতি মহোদয় এ মুহূর্তে একটি জরুরী সাধারণ সভা অাহবান করুন।
২। যেহেতু সভাপতি মহোদয়কে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মান্য করছেন না, পরামর্শ গ্রহণ করছেন না, সভাপতিকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন, তাই এ মুহূর্তে সভাপতির পদত্যাগ করা উচিত। সভাপতির স্ট্যাটাসের কমেন্টগুলোতে সাধারণ সদস্য ও তরুণ সদস্যরাও সভাপতির পদত্যাগের কথা বলেছেন।
৩। জরুরী সাধারণ সভায় সমিতির ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে। এ ক্ষেত্রে সভাপতি এ কমিটিকে ভেঙ্গে দিবেন।

শিক্ষা ক্যাডারের এখন চরম ক্রান্তিকাল। এ সময়ে ব্লেমগেম অার নয়। সাধারণ সদস্যরা এ সমিতির উপর একেবারেই অাস্থা রাখতে পারছেন না। তাই অাশা করছি, সভাপতি মহোদয় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
…..
ক্যাডার পূজারী নেতা চাই।
অাত্তীকরণমুক্ত ক্যাডার চাই।
..

বিসিএস সমিতির আরেক সদস্য ফেসবুকে লেখেন:

“মোঃ মাঈন উদ্দিন
22 hrs
এর শেষ কোথায়????
……………………..

১। কর্মবিরতির ২ দিন পর মহাসচিব স্যার স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যে, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় উনাকে ফোন করেছেন যে জাতীয়কৃতরা নন ক্যাডার হবেন।
২। ৩০ নভেম্বর ২০১৭ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয়কৃতদের নন- ক্যাডার করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।
৩। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ মাননীয় মন্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতি পালন করায় নন- ক্যাডার বিধিমালা করার বিষয়টি স্থগিত আছে।
৪। শপথ পড়ানো ৬/৭/৮ জানুয়ারির কর্মবিরতি স্থগিত করেছে সাংগঠনিক শিষ্টাচার না মেনে। কোন রকম প্রেস রিলিজ কিংবা সাংবাদিক সম্মেলন ব্যতীত গোপন আঁতাতের মাধ্যমে নিজেদের চেয়ার বাঁচানোর জন্য যে কায়দায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে, তা ১৪ হাজার ক্যাডার সদস্যদের বুকে ছুরিকাঘাতের শামিল।তাঁদের এহেন কর্মকান্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই।”

উল্লেখ্য, সেনাশাসক জিয়াউর রহমান সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় সরকারি কলেজ শিক্ষকদের জন্য বি সি এস শিক্ষা ক্যাডার চালু করেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত মেধাবীদের পছন্দের পররাষ্ট্র, প্রশাসন ও ট্যাক্স ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো সুযোগ সুবিধা না দেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের মন খারাপ থাকে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে জায়গা না থাকায় তারা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনায় লিপ্ত থাকেন। যুগ যুগ যাবত এমনটা চলতে থাকায় সরকারি কলেজের শিক্ষার মান তলানীতে পৌঁছেছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে আগস্ট সরকারি কলেজগুলোক আঞ্চলিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়ার অনুশাসন দেন। কিন্তু বি সি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতি প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুশাসনের বিরোধীতা করছেন। সমিতির যুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গেলে তারা দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষক হয়ে যাবেন। তাদেরক আদেশ দেবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এটা তারা মানতে চাচ্ছেন না।

সমিতির বিরোধীতার যার ফলে অদ্যাবধি মাত্র সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঢাকার কয়েককটি কলেজের শিবির ও ছাত্রদল কর্মীদের উসকানি দিয়ে মাঠে নামানোর অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা ক্যাডার সমিতির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029568672180176