ট্রাফিক জটে প্রাথমিক শিক্ষা উল্টো পথে ঘুরছে

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

Primary-400বর্তমান সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণের সাফল্য সারা বিশ্বে বিরল। এ কর্মকান্ড বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। এর মহান উদ্দেশ্য ম্লান করে দিয়েছে শিশুদের জন্য কঠিন কঠিন ইংরেজি, বাংলা বইসহ নোট গাইডের ব্যাপকতা।

প্রথমিকের যোগ্যতা বিত্তিকের নামে পাঠ্য বই বহির্ভূত প্রশ্ন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক সকলের কাছে নোট গাইডের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বার বার লেখা লেখির পরও কেউ কানে তুলছে না। ব্যপারটা এখন কামারের দোকানে কোরআন পড়ার মতো।

অপর দিকে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমীর (নেপ) কতিপয় কর্মকর্তার অদৃশ্য হাতের ছোঁয়া নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে। সব কিছুই যেন ম্যানেজ করে চলছে। এ চলা আর কত দিন আগামী প্রজন্মকে উল্টো পথে ঠেলে দিবে এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ঠদের কাছে।

এ দেশের মানুষের বদ্ধমূল ধারণা মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকারের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রণালয়ের প্রধান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী। এরকম ধারনা বাস্তব। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তা পূরণ করেনি সরকার। পুরোটাই ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি।

প্রধান শিক্ষকদের ৮ হাজার টাকা স্কেলের ২য় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া ও সহকারী শিক্ষকদের পরবর্তী নিচের স্কেল দেয়ার প্রস্তাবও প্রেরণ করা হয়। অথচ ট্রাফিক জটে এ আদেশ রুট পরিবর্তন হয়ে প্রধান শিক্ষকদের ৬ হাজার ৪০০ স্কেলে ২য় শ্রেণির ও সহকারী শিক্ষদের ২টি স্কেল নিচে বেতন দেওয়ার আদেশ জারি হয়। এ আদেশ অর্থ সংস্থাপন ও সংশিলষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষরের জারি হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের ভাষণে (০৯.০৩.২০১৪) এ ঘোষণা দেন। ঘোষণার ২বছর পরও প্রধান শিক্ষকদের ট্রাফিক জটে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক বেতন নির্ধারণ করা সম্বভ হয়নি।

সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল সিনিয়রদের পিপি দেখিয়ে ঘোষণার দীর্ঘ দেড় বছর পর বেতন নির্ধারণ করা হয়। অনেকের দীর্ঘ সময় বেতন না বেড়ে একই জায়গায় আটকা পড়েন। সাধারণত ট্রাফিক জট কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষকদের যে কোনো ধরনের প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে এক বিশাল জটের পথ পাড়ি দিতে হয়। বকেয়া বেতন প্রাপ্তির অনুমোদন, টাইম স্কেল, পেনশন প্রাপ্তি যেন বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এ জট সরাতে বিপুল অর্থও খরচ করতে হয়।

এক আদেশ বলে প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা আপাতত স্থগিত করা হয়। এ যেন দুঃসহ ট্রাফিক জট। খোদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রাথমিক শিক্ষকেরা খানিকটা স্বস্তি পান। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ভুলন্ঠিত করার সাহস কারা করল, কেন করলো ব্যাপারটি বোধগম্য নয়। অপর দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর সহকারি শিক্ষদের বেতন বৈষম্য দূর করার প্রস্তাব অদৃশ্য করে দেয় কোন মহল ? কি এমন শক্তি ও সাহস তাদের! ট্রাফিক পুলিশদের হাতের ইশারায় বা সংকেতে কিছু সময়ে জন্য যানবাহন চলাচলা বন্ধ থাকে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রের এ বিড়ম্বনা যেন শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু এর বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের ভাবনা নেই বললেই চলে।

বেতন স্কেল চূড়ান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে সহকারি শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল প্রাজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাত শেষে অর্থমন্ত্রী ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে অনেক আবেগ ও ভালোবাসা নিয়ে জানালেন, ইতিপূর্বে শিক্ষকদের  এ বৈষম্য আমাকে অন্য কেউ জানায়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে বৈষম্য দূর কারা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থের ভান্ডার যার হাতে তার কাছ থেকে এ আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। তার পরের গল্প সবার জানা। আশাহত শিক্ষকেরা আকাশ থেকে পড়লেন। আজকের দিনে প্রাথমিক শিক্ষদের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী প্রদত্ত সহাকারি শিক্ষদের বেতন বৈষম্য দূর করার আশ্বাস ও প্রাজ্ঞ অর্থমন্ত্রীর মিডিয়ার সামনে বক্তব্য- সবই কি রাজনৈতিক বক্তব্য ? দেশের সাধারণ মানুষ জ্ঞাত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকেরা সেকেন্ড ক্লাস প্রাপ্ত হয়েছেন। তাহলে তো শিক্ষকেরা গেজেটেড। মন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর আশ্বাসে বেতন বৈষম্য শিগগির হতে বাধ্য।

বছরের পর বছর এ ধরনের জ্যামে আটকে টায়ার ব্রাষ্ট হয়ে প্রাধমিক শিক্ষকদের স্বপ্ন খান খান হয়ে যায়। শিক্ষকদের সামান্য প্রাপ্তি পাওনা নিয়ে লুকোচুরি অনেকটা ছেলে খেলায় পরিণত হয়েছে। শিক্ষদের অবস্থা অনেকটা উপর দিয়ে ফিটফাট, ভিতরে সদরঘাট প্রবাদের মতো। এতে শিক্ষকেরা তাদের সামান্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার। একটি ঘৃণ্যচক্র হেয় প্রতিপন্ন করছে মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও খোদ প্রধান মন্ত্রীকে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ভূয়া সনদের মাধ্যমে যে সব শীর্ষ কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে পেনশন সুবিধা নিয়েছেন, তারা দেশের শত্রু। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের চেয়েও জঘণ্য। তারা প্রাথমিক শিক্ষা ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে থেকে দূর্নীতির ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন। তাদের রেখে যাওয়া অনুচররা আজ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ঠ করছে।

প্রাথমিক শিক্ষকসহ এদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী জনগণ সে সব ঘৃণ্য ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করছে। ফ্লাইওভার, উরালসেতু, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু, চার লেইন রাস্তা ও নানা ধরনের অবৈধ দখল উচ্ছেদের মাধ্যমে যানজট দূর করার পদক্ষেপে এদেশের মানুষ উন্নত বিশ্বের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষের শিক্ষায় জট লাগিয়েও শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনার কথা ঘোষণা দিয়ে বঞ্চিত করা একেবারে অনুচিত।

শিক্ষদের বোকা বা নিরীহ ভাবা ঠিক নয়। অধিকার বঞ্চিত হলে এদেশের সাধারণ মানুষ বলে থাকে, পাওনা একালে না দিলে পরকালে দিতে হবে । তখন দেওয়ার সুযোগ পাবে না ।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের সরকারের কাছে নিবেদন, শিক্ষাক্ষেত্রে এ জট নিরসন করুন । নচেৎ জটের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ ও জাতি। শিক্ষাবান্ধব হিসেবে খ্যাত এ সরকার জটের কবলে পড়ে হাবুডুবু খেয়ে মারা যাবে। এ প্রত্যাশা দেশপ্রেমিক জনগণসহ প্রাথমিক শিক্ষকদের নয় ।

শিক্ষা ও শিক্ষক সকল যন্ত্রণামুক্ত । শিক্ষা ক্ষেত্রের সকল জট উপড়ে ফেলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন হোক সকলের ।

এ প্রত্যাশায়-

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম।



পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026848316192627