ট্রেনের বগির সংখ্যা নিয়ে চবি-রেলওয়ের দুই রকম বক্তব্য

চবি প্রতিনিধি |

শিক্ষার্থী পরিবহনে সেবা ও ভর্তুকির পরিবর্তে মুনাফা করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)! বাজেট থেকে ব্যয় না করেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া ফি’র ৩০ শতাংশের বেশি অর্থ সাশ্রয় করে অন্য খাতে ব্যয় করছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে পরিবহন ফি বাবদ আদায় করা অর্থের ৩০ শতাংশ মুনাফা করছে চবি। অথচ ট্রেনে বগির সংখ্যা অপর্যাপ্ত। ফলে দেশের একমাত্র শাটল ট্রেননির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চরম নাজুক অবস্থায় গাদাগাদি করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শাটলে করে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে যাতায়াত করছে।  

প্রতি বছর চবি শিক্ষার্থীপ্রতি ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকারও বেশি ভর্তুকি দেয়। একই সময়ে যে পরিমাণ ফি বা আনুষঙ্গিক অর্থ আদায় করে তার অন্যতম পরিবহন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ৫৭৯ টাকা আদায় করা হয়। সরকারি বরাদ্দের মাধ্যমে বিপুল ভর্তুকির মধ্যেও পরিবহন ফির একটি বড় অংশই ব্যয় না করে লাভ করছে প্রশাসন। এতে চট্টগ্রাম শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ নথিপত্রে দেখা গেছে, প্রতি মাসে শাটল ট্রেন চলাচলে চবি প্রশাসন ৯ লাখ ৬৮ হাজার ২৯০ টাকা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়েকে। তবে রমজান মাসসহ বিভিন্ন বড় বন্ধের সময় আনুপাতিক হারে শাটল ট্রেন বাবদ রেলওয়েকে অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয় চবি। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৭ হাজার ৪৮৩ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ কোটি ৫৯ লাখ ১২ হাজার ৬৫৭ টাকা আদায় করলেও শাটলের ভাড়া বাবদ রেলওয়েকে জমা দিয়েছে ১ কোটি টাকার কিছু বেশি। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিবহন ফি বাবদ নেয়া প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ না করে চবি লাভ করছে!  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চালানো হয় না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে ভর্তুকির মাধ্যমে রেলওয়ে ঐতিহ্যবাহী শাটল ট্রেন পরিচালনা করে। চবি প্রশাসন যেভাবে ট্রেন চালানোর কথা বলবে আমরা সেভাবেই কোচ কম্পোজিশন, শিডিউল নির্ধারণ করি। ফলে শাটল ট্রেনের বগি কম থাকা, শিক্ষার্থী অনুপাতে ট্রেনের সংখ্যা কম হওয়ার বিষয়টি রেলওয়ের ওপর বর্তায় না।’

এ বিষয়ে কয়েক দফা সেলফোনে যোগাযোগ করা হলেও চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যোগাযোগ করা হলে চবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘আমাদের উপাচার্য আজকের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শাটল ট্রেনের কোচ ও ট্রেন সংখ্যা বাড়াতে বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও রেলওয়ে বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। শাটল ট্রেন দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী আহত হওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো দায় নেই।’ 

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ পরিবহন ফি আদায় করা হয় সেটি শতভাগ ব্যয় না করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করার সময় গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ১৫ শিক্ষার্থী চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যান। হাটহাজারী উপজেলার ফতেয়াবাদ স্টেশনের কাছে সংঘটিত দুর্ঘটনায় আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার। ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য দাবি করেন, ‘বারবার বলার পরও শাটল ট্রেনের বগি ও ট্রেন সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হলেও রেলওয়ে সেটি আমলে নিচ্ছে না।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এইচএসসিতে বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৯ - dainik shiksha এইচএসসিতে বরিশাল বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২৯ পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে - dainik shiksha শিক্ষায় কী হলো তিন মাসে মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী - dainik shiksha মাদরাসায় চলে যায় প্রাথমিকের ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের - dainik shiksha অবশেষে কপাল খুললো পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে বাদপড়াদের শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ১৫তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026829242706299