ডলার সংকটে তৃতীয়-চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। তবে সে হারে বৃদ্ধি পায়নি রপ্তানি আয়। ফলে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বেড়ে গেছে ডলারের দাম। চরম ডলার সংকট দেখা দিয়েছে ব্যাংক খাতে। এলসি মূল্য পরিশোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ডলার সংকট চতুর্থ প্রজšে§র ব্যাংকগুলোয়। বিভিন্ন কারণে এসব ব্যাংকের রপ্তানি বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটেনি। আমদানিতেও অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় তারা পিছিয়ে। ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র খুলতে বিড়ম্বনায় পড়ছে ব্যাংকগুলো। তবে যেসব ব্যাংকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি তাদের কাছে পর্যাপ্ত ডলার আছে। এর বিপরীতে পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স না আসায় ডলার সংকটে পড়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহে সবচেয়ে এগিয়ে ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও সাউথইস্ট ব্যাংক। অন্যদিকে রেমিট্যান্স সংগ্রহে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন, পদ্মা, এনআরবি, মিডল্যান্ড, মধুমতি, মেঘনা, গ্লোবাল ইসলামী, এনআরবি কমার্শিয়াল ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচাল অ্যান্ড কমার্স।

ডলারের প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছে অনেক ব্যাংক। তাতেও সংকট কাটছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে কিছু ব্যাংক। কিন্তু আবেদন করেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনেক ব্যাংক ডলার পাচ্ছে না, এমন অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি অবহিত করার জন্য গভর্নরের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে একটি ব্যাংক।

আমদানি ব্যয় যে হারে বাড়ছে, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স থেকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় হচ্ছে সে তুলনায় কম। এতে চাপে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। এ অবস্থায় গাড়িসহ বিলাসপণ্যের আমদানিতে ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও এ সময়ে যাতে আমদানি দায় পরিশোধে কেউ যেন ব্যর্থ না হয়, সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১০ মে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রির মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর আগে কোনো এক অর্থবছরে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। 

জানা গেছে, গত অর্থবছর বিভিন্ন ব্যাংকের হাতে উদ্বৃত্ত ডলার থাকায় তাদের কাছ থেকে রেকর্ড ৭৯৪ কোটি ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একের পর এক রেকর্ড হতে থাকে। গত বছরের জানুয়ারিতে ৪২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার থেকে আগস্টে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারে। অথচ এখন তা ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। গত মঙ্গলবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ২২৪ কোটি ডলারের দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ব্যাংকিং চ্যানেলে গত ২২ মার্চ প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এরপর কয়েক দফায় দাম বাড়ানো হয়। আর গত সোমবার তা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তবে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের থেকে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৯২-৯৩ টাকা আদায় করছে। ৯৫ টাকা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ, যদিও ব্যাংকগুলোর ঘোষিত দামে তা উল্লেখ নেই।

উল্লেখ্য, ডলারের দাম বাড়ায় এবং রিজার্ভে টান পড়ায় এখন বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের ঋণপত্র খোলার সময় নগদ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনার প্রভাব এবং বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থার কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় দেশের মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অধিকতর সুসংহত রাখার লক্ষ্যে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার পুনর্নির্ধারণ করা হলো। এর ফলে মোটর কার (সেডান কার, এসইউভি ইত্যাদি) ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহƒত ইলেকট্রনিক সামগ্রীর আমদানির ঋণপত্র খোলার সময় ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে হবে।

এদিকে ডলারের সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণেও লাগাম টানার নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053749084472656