ডিজিটাল মনিটরিং: কলেজ শিক্ষকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রস্তাবিত ডিজিটাল মনিটরিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা। তাঁরা বলেছেন তারা একই সঙ্গে শিক্ষক এবং ১ম শ্রেণির ক্যাডার কর্মকর্তা। তাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মনিটরিংকে  অপমানজনক বলেও অভিহিত করেছেন অনেক শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার কয়েকটি সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক দৈনিকশিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষা ক্যাডার ছাড়া আর কোনো প্রথম শ্রেণির ক্যাডার কর্মকর্তাদের এমন মনিটরিংয়ের নজির নেই। মোবাইল ফোন দিয়ে জানতে পারবে কলেজে অবস্থানের খবর। কিন্তু কলেজে থাকলেই ক্লাস নিবো তা কীভাবে হয়। কেউ কেউ বলেছেন, ‘মন পাবি তো মগজ পাবি না’।

জানা যায়, ক্লাস ফাঁকি আর বদলির তদবির ঠেকাতে ডিজিটাল মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এর ফলে সরকারিভাবে দেয়া একটি নির্দিষ্ট সিম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষককে মনিটরিং করা হবে। জিপিআরএস পদ্ধতিতে ওই সিমের মাধ্যমে মাউশির মনিটরিং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এসব শিক্ষকদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন। আগামী এপ্রিল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ পদ্ধতিটি শুরু করার চেষ্টা চলছে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার চিন্তা রয়েছে আমাদের। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে রাষ্টায়ত্ত কোম্পানি টেলিটক ও বাংলালিংকের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যেক শিক্ষককে মোবাইল সিমকার্ড দেয়া হবে। জিপিআরএস পদ্ধতিতে মোবাইল ট্রাকিংয়ের আওতায় মাউশিতে বসেই শিক্ষকদের অবস্থান নিশ্চিত করা হবে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনিক কাজে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষরা বেশিরভাগ সময়ই কলেজে উপস্থিত থাকেন না। এ সুযোগে শিক্ষকরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে থাকেন। অনেক শিক্ষক পছন্দের কলেজ, মাউশি, শিক্ষা বোর্ডসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রকল্পে পদায়নের জন্য তদবির করতে মন্ত্রণালয়ে ভিড় করেন। বসত বাড়ি থেকে কর্মস্থল দূরে থাকায় অনেক শিক্ষক সপ্তাহে দুই তিন দিনের বেশি কলেজে যান না। কলেজে গেলেও ঠিকমতো পাঠদান করেন না। তবে মাস শেষে বেতনভাতা ঠিকই তুলে নেন। জানা গেছে, দেশে ৩২৯টি সরকারি কলেজে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক আছেন। এদেরে অধিকাংশই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। যিনি যেখানে আছেন তাকে সেটার ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষকদের বলে দেবেন, যে কোনো রকমে ক্লাস নিয়ে চলে আসার মধ্যে সার্থকতা নেই। ব্যর্থতার জন্য প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে। আপনাদের কাজ কলেজে শিক্ষা দেয়া। কিন্তু অনেকেই আসেন অফিসার হতে। তা না পারলে ঢাকায় পোস্টিং চান। দৈনিক আমি ১০০ জনকে সাক্ষাৎ দিলে ৮০জনই পাই এ তদবিরের। ওই সম্মেলনে অধ্যক্ষদের বিভাগওয়ারী ভাগ করে গ্রুপ আলোচনার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার জন্য ৩৬টি সুপারিশ তুলে আনা হয়। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হচ্ছে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত, সময়মত শ্রেণি কক্ষে গমন, সাপ্তাহিক/পাক্ষিক/টিউটোরিয়াল পরীক্ষা নেয়া, দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে পৃথকভাবে পরিচর্যা করা।

মাউশি মহাপরিচালক বলেন, অনেক শিক্ষক কলেজ চলাকালীন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকছেন না। এদের মধ্যে অনেকে সপ্তাহে ২-৩ দিনের বেশি কর্মস্থলে যান না। বিশেষ করে মফস্বল এলাকায় ভয়াবহ অবস্থা। পাঠদান অনিহার কারণে এ পর্যায়ের শিক্ষার গুনগতমান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রতি বছরই পাবলিক পরীক্ষায় তুলনামূলক খারাপ ফল হচ্ছে। শিক্ষক উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছি।

সূত্র জানায়, শিক্ষকদের ডিজিটাল হাজিরা নিশ্চিত করতে গত জানুয়ারি থেকে মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে সারা দেশের ৩২৯ কলেজের প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষকের সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক ও অধ্যক্ষদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় সভা করেছেন। সভায় ডিজিটাল হাজিরার বিষয়ে শিক্ষকদের অবগত ও তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025811195373535