দৈনিক শিক্ষাডটকম, ত্রিশাল: আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে প্রশান্তির সংকট। মানুষের ভেতরে শান্তি নেই, বাকি সব আছে। টাকা আছে, পয়সা আছে, স্মার্ট ফোন আছে কিন্তু মনের ভেতরে শান্তি নেই। বাউলরা সেই প্রশান্তিই খোঁজে। তারা মনের প্রশান্তির খুঁজে দেয়। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে ‘বিশ্ব সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের বাউল ও লোকশিল্পী’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দুদিনব্যাপী বাউল ও লোকগানের কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর এসব কথা বলেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থা।
বাউল শিল্পকে বাঙালির নিজস্ব শিল্প বর্ণনা করে উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, বাউল আমাদের নিজস্ব। আজকে পাশ্চাত্য যে অভিঘাত, এই অভিঘাত থেকে বাউল সাধকরা আমাদের মুক্তি দিতে পারে। তারা কিন্তু অন্যকিছু চান না। তাদের যে দর্শন, এই দর্শনকে দেখবার জন্য, উপলব্ধি করবার জন্য বিদেশ থেকে লোক আসছে। এই বাউল আমাদের নিজস্ব সম্পদ। যে সম্পদ দিয়ে আমরা সারা বিশ্বে পরিচিত হতে পারি।
মিউজিক থেরাপিকে পৃথিবীর অন্যতম মহোষৌধ বর্ণনা করে তিনি বলেন, অনেকে মন্তব্য করেন যে, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে ঘুম পায়। আমার কথা হচ্ছে যে, রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে যদি ঘুম আসে, তাহলে এর থেকে ভালো কিছু আর নেই। প্রত্যেক হাসপাতালের উচিত চিকিৎসাপত্রে রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখে দেয়া। যেন বড় বড় অপারেশনের পরে ঘুমের ওষুধ না লিখে রবীন্দ্রসঙ্গীতে কথা লিখে দেন। কেননা রবীন্দ্রনাথ যদি গান লিখে কাউকে ঘুম পাড়াতে পারেন, তাহলে পৃথিবীতে এর থেকে মহোষৌধ আর কিছু হতে পারে না।
সঙ্গীতের পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় সহায়তা বৃদ্ধির তাগিদ জানিয়ে ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, সঙ্গীত আমাদের যেমন মানসিক স্থিতি দেয়, তার পাশাপাশি রাষ্ট্রেরও উচিত আমাদের সঙ্গীত চর্চায় যারা যুক্ত তাদেরকে আর্থিকভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করা। বেশি দরকার নেই বরং শিল্পীরা যাতে খেয়েপড়ে বাঁচতে পারেন, এইটুকু যদি করা হয় তাহলেই হবে। এই যে চারদিকে এতো সংকটের কথা আমরা বলছি, এই সংকট এই সঙ্গীত শিল্পীরাই দাঁড় করিয়ে ফেলবে। আমরা যদি প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় একশ’জন করে সঙ্গীত শিল্পী দাঁড় করাতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ রক্ষা করার জন্য এরাই যথেষ্ঠ। আর কোনো বিরুদ্ধ মত এদেশে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি আমরা করতে পারছি না। যদিও এটাই আমাদের করা উচিত।