নতুন বই নিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

সারাদেশে বই উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সারাদেশের স্কুলগুলোতে এই বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। 

গতকাল মাধ্যমিকে বই উৎসব হয় গাজীপুরের কাপাসিয়া সদর উপজেলার কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। অপরদিকে প্রাথমিকের বই উৎসব হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। উৎসবে নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

গতকাল ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৩ কোটি ৯১ লাখ ১২ হাজার ৩০০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। অন্যদিকে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৩৮ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হয়। প্রাক প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৪টি আমার বই এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক ও ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির সর্বমোট ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭টি পুস্তক বিতরণ করা হয়। 

মাধ্যমিকের বই উৎসব : 

গতকাল সকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাধ্যমিকের বই উৎসব শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিদায়ী সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওমর ফারুক, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন মোল্লা, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খানসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ২১১ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। এটি পৃথিবীতে কোনো জায়গার জন্য একটি অচিন্তনীয় ব্যাপার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় প্রতিবছর আমরা এ কাজটি করতে পেরেছি। বিনামূল্যে বই দেয়ার ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার রোধ করতে পেরেছি। কারণ বাবা-মায়ের ওপর বই কেনার ভারটি আর থাকছে না।

তিনি আরও বলেন, নতুন বই একেবারে বছরের প্রথম দিন এখন শিক্ষার্থীরা হাতে পায়। ছোট বেলায় আমাদের এতো সৌভাগ্য হয়নি। আমাদের তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। সবারই তাই মনে হচ্ছে, ইশ্ আবার যদি তোমাদের মতো ছোট হতে পারতাম। তোমাদের আনন্দেই আমাদের আনন্দ।

মন্ত্রী বলেন, কেউ যে বাংলাদেশকে আর কোনো দিন দাবিয়ে রাখতে না পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করে দিয়েছেন। এখন স্বপ্ন দেখিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশের। সে দেশের নাগরিক, অর্থনীতি ও সমাজ হবে স্মার্ট। এ স্মার্ট সমাজ গড়তে আমাদের দরকার স্মার্ট শিক্ষা। নতুন শিক্ষাক্রম তৈরির মাধ্যমে আমারা সেদিকেই এগিয়ে চলেছি। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা এমন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছি যেখানে শিক্ষা হবে আনন্দময়। যেখানে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ভীতি থাকবে না। কেমন করে শিখতে হয় তাও শিখে ফেলবে। তার মধ্যে দিয়ে জীবনব্যাপী শিক্ষার পথ তোমাদের জন্য খুলে যাবে। 

দীপু মনি বলেন, জাতির পিতা যেমনটি চেয়েছিলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানমনস্ক হবে। প্রযুক্তিবান্ধব শুধু নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে দক্ষ হবে। আমাদের মূল্যবোধ নিয়ে বড় হতে হবে। সততা, মানবিকতা, পরমতসহিষ্ণুতা থাকতে হবে। একে অন্যের সঙ্গে কাজ করবার দক্ষতা থাকতে হবে। আমার দক্ষ, যোগ্য, মানবিক, সৃজনশীল মানুষ হবো। পিতা মুজিব ঠিক এমনটি বলেছিলেন। আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা মানুষের পাশে দাঁড়াবে। তোমরা গাছ লাগাবে। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে, পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবে। 

প্রাথমিকের বই উৎসব : 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় প্রাথমিকের বই উৎসব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। বিশেষ অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর আজকের শিশুরা। তাই অভিভাবকদের অনুরোধ করবো-আসুন আমরা আমাদের শিশুদের স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলি।

তিনি বলেন, শিক্ষা মানবিক ও বুদ্ধিভিত্তিক নাগরিক তৈরি করে। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতায় এসে প্রাথমিক শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ উৎসব আয়োজন করা হয়।

নুতন বছরের প্রথম দিনে সব বই শিক্ষার্থীরা হাতে পাননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব বই কাগজের অভাবে প্রেস থেকে দিতে পারিনি। আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা সব বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবো বলে আশা করি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছরের মতো আমরা বই বিতরণ উৎসব করে যাচ্ছি। প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে জাতির জনকের মতো কেউ ভাবেনি। আমি পাকিস্তান আমলেও দেখেছি উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা ও তার যুগোপযোগী করার জন্য শ্রেণি কক্ষের উন্নয়ন, ডিজিটাল করা, মানসম্মত শিক্ষকসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, সারাদেশে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিদেশে আমাদের মিশনগুলোতেও আজ বই উৎসব চলছে। প্রাথমিকে শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। বাচ্চাদের বইয়ের বোঝাও কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে ঝড়ে পড়ার হারও কমে গেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055861473083496