পরবর্তী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানানো আমাদের দায়িত্ব : ড. জাফর ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

‘আমি বিদেশ থেকে যখন দেশে ফিরি ১৯৯৪ সালে। তখন দেখলাম বঙ্গবন্ধু নির্বাসিত। আপনারা কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না সে সময়ের কথা।’ গ্রাফিক নভেল 'মুজিব' এর অষ্টম পর্বের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে রোববার সন্ধ্যায় কথাগুলো বলেন জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না বঙ্গবন্ধুকে আমরা কতটা অনুভব করাতে পারব, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তথ্য জানুক বা না জানুক, তারা যেন বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করতে পারে সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ও ‘সার্ভাইভিং৭১’-এর পরিচালক ওয়াহিদ ইবনে রেজা, গ্রাফিক নভেল মুজিবের কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময় এবং সংগীতশিল্পী কারিশমা সানু সভ্যতা।

গ্রাফিক নভেল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক সুন্দর হয়েছে এবং পরবর্তী ভলিউমগুলো দেখার জন্য বেশ আগ্রহ নিয়ে আমি অপেক্ষা করছি। এখানে বঙ্গবন্ধুর শৈশবটা এত স্পষ্ট ছিলো। তার নিজের লেখা! ছোট বাচ্চারা এটা পড়ে কতই না মজা পাবে। আমি জানি না বঙ্গবন্ধুকে আমরা কতটা অনুভব করাতে পারব, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানানো আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তথ্য জানুক বা না জানুক, তারা যেন বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করতে পারে সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘এককভাবে বঙ্গবন্ধুকে সম্পূর্ণ তুলে ধরা বেশ অসম্ভব। আমরা চেষ্টা করে যেতে পারি। যত দিন যাচ্ছে তত তার সম্পর্কে আমরা জানছি। তার লেখা তিনটি বই আমরা পেয়েছি। আগে যা জানতাম না, এখন তার অনেক কিছু জেনেছি। সেই সঙ্গে জানতে পেড়েছি উনি কত ভালো মানের একজন লেখক। তার বইয়ের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় দাগ দিয়ে রেখেছি। আর গ্রাফিক্স নভেল বেশ ভালো। কেননা এখনকার ছেলে-মেয়েরা পড়তে চায় না। কিন্তু তাদেরকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে হবে। না হলে তারা বাংলাদেশ সম্পর্কেই জানতে পারবে না। এটা খুব চমৎকার একটি আইডিয়া। কেননা আমার মনে আছে, যখন ছোট ছিলাম, তখন কমিক্স, কার্টুন দেখতে ভালো লাগতো। এখন বড় হওয়ার পরও কমিক্স দেখতে খুব আনন্দ পাই। আর সে কারণেই এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আমি আর্টিস্টকে বলব, আপনার জন্য কাজটা অনেক সহজ হয়েছে। কেননা বঙ্গবন্ধু অসম্ভব রকমের একজন হ্যান্ডসাম মানুষ। আমাকে যে কেউ জিজ্ঞাসা করলে সবার আগে আমি যেটা বলি, মাই গড এমন একজন মানুষ, সুপুরুষ বলতে যাকে বোঝায়। কী সুন্দর চেহারা! এত সুন্দর একজনকে মানুষকে আঁকতেও তো ভালো লাগে।’

আপনার দেখে শৈশবে কেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘লজ্জা লাগে বলতে, কিন্তু আমার জন্ম তৎকালীন পাকিস্তানে হয়েছে। আন্দোলন হচ্ছে, আমরা দেখেছি। '৬৯ সালে আন্দোলন হচ্ছে। আমরা পোস্টার আঁকছি, এমন এক সময় শেখ কামালের সঙ্গে দেখা হলো একদিন। আমার থেকে হয়ত এক বছরের বড় হবে। আমাকে বলল, ধন্যবাদ, আমাদের জন্য কাজ করছেন। আন্দোলনের সময়টা তো আমরা ঢাকায় ছিলাম। তাই অনেক কিছু দেখেছি। আন্দোলন চলেছে দীর্ঘদিন। আমরা আসলে ভেতর থেকে অনুভব করতে পারতাম যে, উনিই সেই মানুষ, যিনি আমাদের মুক্তি দেবেন। খুব সম্ভবত তিনিও বিষয়টি অনুভব করতেন। এটা কিভাবে সম্ভব ছিলো তা জানি না। কিন্তু তখনকার সময়ে সকলেই এটা বিশ্বাস করেছিলো। এরপর শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। যারা সে সময় দেখেছে তারাই কেবল বলতে পারবেন। সে সময় উনি যদি আঙ্গুল তুলে একটা কথা বলতেন, সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু আটকে যেত। তার কথায় পুরো দেশ চলেছে। এরপর ‌'৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় উনি ত্রাণ নিয়ে যখন গেলেন, তখনই বুঝে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেনও, এই পাকিস্তান দিয়ে হবে না।’

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দিনটিকে স্মরণ করে জাফর ইকবাল বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর আসার কথা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন। আমার তখনকার অনুভূতি ছিলো, ‘কী সৌভাগ্য, তার সঙ্গে আমার দেখা হবে’। সকালে উঠে আমি কাপড় ইস্ত্রি করছিলাম। আর ঠিক তখন শুনলাম, রাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ভাবতে পারা যায়! কত বড় দুর্ভাগা আমরা! আমাদের নিজের কানে শুনতে হয়েছে যে তাকে হত্যা করা হয়েছে! বর্তমান প্রজন্ম কতটা সৌভাগ্যবান, স্বমহীমায় বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। আমরা এখন তার জন্ম শতবর্ষ পালন করছি। বঙ্গবন্ধুর কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা শুধু কৃতজ্ঞতা জানাতে পারি।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে একটু পর পর তার বজ্রকণ্ঠ শোনানো হয়েছে। পুরো মুক্তিযুদ্ধে তিনি আটক ছিলেন। কিন্তু তার বজ্রকণ্ঠ দিয়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। পৃথিবীতে আর কোন নেতা এমন করতে পেরেছেন বলে আমার জানা নেই। যিনি উপস্থিত থেকেও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, উপস্থিত না থেকেও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।’

গ্রাফিক নভেল মুজিবের কার্টুনিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময় বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, গ্রাফিক নভেল পড়ে উনাকে সুপার হিরো মনে হচ্ছে। আসলেই উনি এমন ছিলেন কী? কেননা মহাত্মা গান্ধী এবং আরো অনেককে নিয়ে গ্রাফিক নভেল আমরা পড়েছি, সেখানে এত উত্তেজনা ছিলো না, এখানে কেনো? তার উত্তরে আমি বলেছি, আসলে উনি যা লিখেছেন। সেখানে এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে তিনি লাফিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সময়টাই তো ছিলো এমন উত্তেজনাকর। তিনি পাঞ্জাবিদের সঙ্গে মারামারি করছেন। সবকিছুকে নিজের করে নেওয়া যাকে বলে। কাছের মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করেছেন। সুতরাং অন্যদের চরিত্রের সঙ্গে তাকে মেলালে আসলে হবে না। একেক মানুষ একেক রকম। একটা নায়কোচিত ভূমিকা তার মধ্যে ছিলো।’

'সার্ভাইভিং৭১'-এর পরিচালক ওয়াহিদ ইবনে রেজা জানান, ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এতটা সম্পৃক্ততা এতটা বিস্তারিত আমি জানতাম না। এই গ্রাফিক নভেল পড়ার পর জানতে পেরেছি। আশা করছি পাঠকেরা এটা পড়ে অনেক ভালো লাগবে।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে নিজের লেখা একটি গান গেয়ে শোনান সংগীতশিল্পী কারিশমা সানু সভ্যতা। এর আগে তিনি গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এতো উত্তেজনায় ভরা একজন রাজনীতিবিদের জীবন হতে পারে এটা আমরা ধারনায় ছিলো না। রাজনীতি তাত্ত্বিকভাবে বেশ উত্তেজনার বলে জানতাম। কিন্তু এর সঙ্গে এ ধরণের টানটান উত্তেজনা থাকতে পারে, বিষয়টা অবিশ্বাস্য। এখানে এমন অনেক কিছুই জানতে পেড়েছি, যা ছোট বেলা থেকে কখনই আমাদের পড়া হয়নি।’

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে গ্রাফিক নভেল সিরিজ ‘মুজিব’ ১২ পর্বে প্রকাশিত হবে। এই গ্রাফিক নভেল ইংরেজি ও জাপানি ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়েছে। সবগুলো পর্ব প্রকাশিত হলে ভলিউম আকারে এই গ্রাফিক নভেল পাওয়া যাবে বলে জানান অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শিবু কুমার শীল।

দেশ জুড়ে নির্বাচিত'র সাত শাখায় পাওয়া যাবে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’-এর প্রকাশিত আটটি পর্ব। সিলেটে পূর্ব জিন্দাবাজারের নেহার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়, যশোরে স্টেডিয়াম মার্কেটের নতুন গ্যালারি ৫, খুলনায় বয়রা বাজার ব্যাংক এশিয়া বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলা, ঢাকায় উত্তরার সেক্টর-৭ এর রাজউক কমার্সিয়াল কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় এবং কাটাবনের কনকর্ড এম্পোরিয়াম শপিং কমপ্লেক্স, বরিশালের বিএম কলেজ রোড এবং কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের মনোহরপুরে নির্বাচিত'র শাখায় পাওয়া যাবে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032589435577393