পাঁচ জেলার স্কুল-মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার হতাশাজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় স্থাপিত মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৯ জেলার মাত্র চারটির চিত্র সন্তোষজনক। বাকি পাঁচ জেলায় ব্যবহারের হার হতাশাজনক। আবার অনেক স্কুল বা মাদরাসা মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে ক্লাস না নিয়েও নিয়মিত ড্যাশবোর্ডে (মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম-সংক্রান্ত ওয়েবসাইট) তুলে রাখছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইং গত বছরের শেষ চার মাসে ৯ জেলার ১২টি উপজেলার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে এ চিত্র পেয়েছে। পরিদর্শন করা উপজেলাগুলো হলো চট্টগ্রামের আনোয়ারা, যশোর সদর উপজেলা, নীলফামারীর সৈয়দপুর, দিনাজপুর সদর ও খানসামা উপজেলা, নড়াইল সদর, সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও গৌরনদী, ভোলার তজুমদ্দিন এবং বগুড়ার শেরপুর। ওই উপজেলাগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারে মাউশি অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পাঁচজন কর্মকর্তা এই অবস্থা দেখতে পান।

সূত্র জানায়, আইসিটি ফর এডুকেশন ইন সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল প্রজেক্টের আওতায় দেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল ও মাদরাসায় একটি করে ডিজিটাল শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি করে ল্যাপটপ, স্পিকার, ইন্টারনেট মডেম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও স্ক্রিন দেওয়া হয়। একজন করে শিক্ষককে ১২ দিনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। আর এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩০৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ প্রতিটি মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপনে সরকারের ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপনের কাজ শেষ হয়।

জানা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির প্রতিদিন ছয়টি বিষয়ের পাঠদান হয়। সেই হিসাবে প্রতিটি শ্রেণিরই প্রতিদিন একটি করে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে পাঠদান হওয়ার কথা। সেই সঙ্গে তা ড্যাশবোর্ডে উঠানোর কথা।

মাউশি অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম মিয়া পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে তিনি দেখতে পান দীর্ঘদিন ধরে ল্যাপটপটি অকেজো পড়ে রয়েছে। শিক্ষকদের আইসিটি সম্পর্কে ধারণাও কম। এ ছাড়া যশোর সদর উপজেলার নতুন খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সম্মিলনী ইনস্টিটিউশনে দেখতে পান তাঁরা ঠিকমতো মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করেন না।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মাহবুবা ইসলাম নীলফামারীর লায়ন্স হাই স্কুল, হাজারীহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সোনাখুলি মুন্সিপাড়া কামিল মাদরাসায় দেখতে পান আইসিটি সম্পর্কে শিক্ষকদেরও ধারণা খুব কম। ফলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার হচ্ছে না। দিনাজপুরের অন্য চারটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেও তিনি একই অবস্থা দেখতে পান।

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শামীম আহসান খান নড়াইল ও দিনাজপুরের ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে দেখতে পান মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষের ব্যবহার হচ্ছে না এবং তা ব্যবহার করার জন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের তত্পরতাও নেই। এমনকি জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে খুব একটা মনিটরিং করেন না।

সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম সিলেট সদর উপজেলায় সাউথ সুরমা উচ্চ বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ সুরমা নছিরা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এতে তিনি দেখতে পান, কর্তৃপক্ষ মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষের খুব একটা ব্যবহার করেন না। ডকুমেন্টেশন ব্যবস্থা সম্পর্কে খুব একটা ধারণাও নেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের।

বরিশালের তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলার তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সিলেটের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, তারা তেমনভাবে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করছে না।

প্রোগ্রামার প্রণব বিষ্ণু মজুমদার বরিশালে চার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গাউছিয়া আবেদীয়া আলিম মাদরাসার ল্যাপটপগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বগুড়ার মেরপুর ডি. জে. মডেল হাই স্কুল, শেরপুর শহীদিয়া কামিল মাদরাসা, সামিট স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষের রুটিন নির্দিষ্ট করা নেই। ফলে শিক্ষকদের ইচ্ছামতো মাঝেমধ্যে এই শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার করেন।

মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের কর্মকর্তারা তাঁদের সুপারিশে বলেছেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারের পাশাপাশি ড্যাশবোর্ডে এন্ট্রি দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। এটি করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি অধিদপ্তর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ মনিটরিং করতে পারবে। মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহার ও ড্যাশবোর্ড এন্ট্রির জন্য উপজেলা পর্যায়ে ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ব্যবহারে তদারকি আরো বাড়াতে হবে।

একাধিক সূত্র জানায়, ২৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করেই আইসিটি প্রকল্প শেষ হয়েছে। কিন্তু মনিটরিং বা পরিদর্শনের জন্য আলাদা কোনো প্রকল্প রাখা হয়নি। আর একটি স্কুল থেকে একজন শিক্ষককে মাত্র ১২ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ ঠিকমতো চালাতে পারছেন না।

মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, ‘ওয়েবসাইটে লাখ লাখ কন্টেন্ট রয়েছে। সেখান থেকে কন্টেন্ট নিয়ে ইচ্ছা করলেই শিক্ষকরা পড়াতে পারছেন। চারটি জেলায় প্রায় শতভাগ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও বাড়ছে, দিন দিন ব্যবহারও বাড়ছে। তবে পাঁচ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ নয়। নিজ উদ্যোগেও শিখতে হবে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054519176483154