বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল রাজধানী ঢাকা। ঐতিহাসিক এবং ভৌগোলিক কারণে ঢাকাকে ঘিরেই এদেশে সর্বপ্রথম উচ্চশিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সময়ের পরিক্রমায় যথাক্রমে রাজশাহী (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), ময়মনসিংহ (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গতিশীলতা আসতে শুরু করে, যা নব্বই দশকের পর সবচেয়ে বৃদ্ধি পায়। এসময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আত্মপ্রকাশের সুযোগ লাভ করে। ইউজিসি থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ৫৫ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১২।
দূরত্বের ভিত্তিতে ঢাকার নিকটতম পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে এই লেখায়। রাজধানীর সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ভৌগোলিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাহিদা এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। দূরত্ব বিবেচনায় ঢাকা এবং এর আশপাশের শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠতে পারে এসকল বিশ্ববিদ্যালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
গাজীপুরের দক্ষিণ সালনায় ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ কৃষি বিজ্ঞান কলেজ (বিসিএএস) নামে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অ্যাকাডেমিকভাবে যুক্ত থেকে এটি কৃষি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইনস্টিটিউট (ইপসা) হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো।
কৃষি, মৎস্য, ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং প্রাণী বিজ্ঞান, কৃষি অর্থনীতি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের অধীনে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে এই বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থা প্রদানে হল, শিক্ষা কার্যক্রম বেগবান করতে গ্রন্থাগার এবং গবেষণার মানকে বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন সহায়ক বিভাগের সমন্বয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আয়তন প্রায় ১৯০ একর।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
টাঙ্গাইলের সন্তোষে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৌশল, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞানসহ মোট সাতটি অনুষদের অধীনে বর্তমানে ২০টি বিভাগের মাধ্যমে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে আবাসিক হল, সুবিশাল গ্রন্থাগার, ক্যাফেটেরিয়াসহ আরো শিক্ষা সহায়ক নানান স্থাপনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস প্রায় ৭১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লার কোটবাড়িতে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় ২৪৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ক্যাম্পাসের এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে প্রকৌশল, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, আইনসহ মোট সাতটি অনুষদের অধীন ১৯টি বিভাগের সমন্বয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। আবাসিক হল, গ্রন্থাগার, শহিদ মিনার, ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা ও গবেষণা সহায়ক স্থাপনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটিতে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে দেশের প্রথম সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীসময়ে প্রায় ৫৭ একর জমির ওপর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই গড়ে ওঠে এটি৷
বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন, সামাজিক বিজ্ঞানসহ মোট ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৪টি বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি প্রদান করে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। 'ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ' নামে কবি নজরুলকে নিয়ে উচ্চতর গবেষণাগার, আবাসিক হল, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মঞ্চসহ বিভিন্ন শিক্ষা এবং গবেষণামূলক স্থাপনা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ময়মনসিংহে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ১২শ’ একর জমির ওপর উপমহাদেশের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে কৃষি, ভেটেরিনারি, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানসহ মোট ছয়টি অনুষদের অধীনে ৪১টি বিভাগ নিয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
আবাসিক হল, ডরমিটরি, মিলনায়তন, গ্রন্থাকার, গবেষণারসহ ব্যবহারিক এবং গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানকারী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে কৃষি গবেষণার খাতে গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার পাশাপাশি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যৌথ গবেষণায় এই বিশ্বিবদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরাই দেশে প্রথমবারের মতো লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন।
লেখক : রিদওয়ান আল হাসান, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়