শিক্ষায় সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য বিনামূল্যে ও বছরের প্রথমদিনে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বিষয়ে দৈনিকশিক্ষায় একটা লেখা দেবার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু সেটি আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। মন মেজাজ বিগড়ে যাবার উপক্রম। বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ে তামাশা আর ভালো লাগেনা। শিক্ষক সমাজকে নিয়ে তামাশা মোটেও কাম্য নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের এতো সব সাফল্য ম্লান করে দেবার ষড়যন্ত্রকারীরা এসব কী শুরু করেছে ? এই তো সেদিনমাত্র জাতির জনক তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বোশেখি ভাতা দিয়ে বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মন জয় করে চতুর্থবারের মতো পুরো দেশ জয় করতে না করতে অবসর ও কল্যাণ তহবিলে দশ শতাংশ কর্তনের আদেশ হরিষে বিষাদের মতো ঠেকেছে। একাদশ সংসদ। নতুন শিক্ষামন্ত্রি ও উপমন্ত্রি। শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন নতুন প্রত্যাশা। তারা যখন জাতীয়করণের স্বপ্নে বিভোর ঠিক তখন অবসর ও কল্যাণ তহবিলে ছয় শতাংশ থেকে দশ শতাংশ কর্তন বৃদ্ধি করার আদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে নিছক তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। শিক্ষার অগ্রযাত্রায় এ এক বড় ব্রেক। জাতীয়করণের স্বপ্ন ও আন্দোলনকে মুছে দেবার এক হীন ষড়যন্ত্র। বেসরকারি শিক্ষক সমাজকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাখার অপপ্রয়াস বৈ অন্য কিছু নয়। এ এক গভীর ষড়যন্ত্র।
বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থা জিইয়ে রাখতে পারলে যাদের লাভ তারা এখন মরিয়া। যে করে হোক বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের হতাশার মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের সন্তানরা লেখাপড়া করে চোখ মুখ ফুটিয়ে তুলবে। এদের চোখ মুখ ফুটে গেলে আরেক শ্রেণির চুরি ডাকাতি বন্ধ হয়ে যাবে। এ না হলে বেসরকারি শিক্ষক সমাজকে নিয়ে প্রতারণার এতো ছলচাতুরী কেনো? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে তাড়াহুড়ো করে এরকম একটি আদেশ জারি করে সরকারকে বেকায়দায় ও বিতর্কের মুখে ফেলার হীন ষড়যন্ত্র দেশের পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছেন। খুব সম্ভব তখন নভেম্বর মাস। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন। ঠিক তখন সরকারি দলের বারোটা বাজিয়ে দেবার জন্য সুকৌশলে ষড়যন্ত্রকারীরা দশ শতাংশ কর্তনের একটি আদেশ জারি করে বসে। তারা চেয়েছিল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা নির্বাচনে যেন সরকারের বিপক্ষে থাকে। সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করে। ভাগ্যিস, সরকার সজাগ থাকায় তাদের সে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। নির্বাচনের এক মাস যেতে না যেতে এখন আবার সেই পুরনো ষড়যন্ত্র নতুন করে মাথা চাড়া দিয়েছে। শিক্ষক সমাজকে এ ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। সরকারকে ও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এ নিয়ে এতো তাড়াহুড়ো করার মধ্যে আসল রহস্যটা কী?
অবসর ও কল্যাণ তহবিলে কর্তন বৃদ্ধির করার সময় এখন নয়। পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বোশেখি ভাতা পাবার পর বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রত্যাশা এখন অন্য রকম। তারা মনে করেন জাতীয়করণ কেবল সময়ের ব্যাপার। সরকার চাইলে যে কোনো সময় দেশের সব স্কুল-কলেজ এক সাথে একটামাত্র ঘোষণায় জাতীয়করণ করে দিতে পারে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রি যেটি করার ইচ্ছে সেটি করতে পারেন বলে তাঁর কাছে শিক্ষক সমাজ উক্তরুপ প্রত্যাশা করে থাকেন। তারা এও মনে করেন যে ইনক্রিমেন্ট ও বোশেখি ভাতার সারপ্রাইজের মতো মাদার অব হিউম্যানিটিখ্যাত শেখ হাসিনা তাঁর চলতি মেয়াদে জাতীয়করণের সেরা সারপ্রাইজটি শিক্ষক সমাজকে উপহার দেবেন। ঠিক এমন একটি সময়ে অবসর ও কল্যাণ তহবিলে শিক্ষক-কর্মচারীদের থেকে দশ শতাংশ কর্তনের আদেশটি একটি কালো আদেশ বলে অন্ততঃ শিক্ষক সমাজ মনে করেন। এ আদেশটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।
বিপুল বিজয় নিয়ে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার সরকারের জন্য এটি এক বড় বদনাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের শিক্ষক সমাজ যেমন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির জন্য খেটেছেন তেমনি শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সুনাম রক্ষার জন্য দশ শতাংশ কর্তনের আদেশের বিরুদ্ধে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীগণ যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। এ বিষয়ে নতুন শিক্ষামন্ত্রি ও উপমন্ত্রি মহোদয়দের আশু হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন। দেশ বাঁচানোর মতো দেশের শিক্ষা ও শিক্ষকদের বাঁচানো এখন খুব বেশী দরকারী হয়ে উঠেছে। শিক্ষকদের বাঁচাতে না পারলে দেশ ও জাতিকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে।
লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।
আর পড়ুন: