প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা : ব্যাপক অনুপস্থিতির কারণ খুঁজে বের করুন

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

গত রোববার থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা। গত বছরই শোনা গিয়েছিল এই পরীক্ষাটি তুলে নেয়া হবে, কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফেরে এবারো বহাল থাকল পরীক্ষাটি। প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় প্রায় দেড় লাখ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। এই বিশাল অনুপস্থিতির কারণ কী? ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে- এগুলো খুবই ভাবনার বিষয়।

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছেই। বই পুস্তক, পাঠক্রম থেকে পরীক্ষা পদ্ধতি সব কিছুতেই চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা খারাপ কিছু নয়, বরং উন্নয়নের স্বার্থে দরকারি। কিন্তু এসব তৎপরতা যদি সুচিন্তিত বা সুপরিকল্পিত না হয় তাহলেই বিপত্তি। শিক্ষার্থীরা যেন ল্যাবরেটরির গিনিপিগ। ঘন ঘন পরিবর্তনের গ্যাঁড়াকলে পড়ে দেশের কোমলমতি শিশুরা বিপর্যস্ত হচ্ছে। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার এক পর্যায়ে ২০০৯ সালে প্রাথমিক স্তরে চালু হলো সমাপনী পাবলিক পরীক্ষা। যাকে বলা হয়ে থাকে ছোট্ট সোনামণিদের এসএসসি পরীক্ষা। এই নতুন পাবলিক পরীক্ষা প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে, যে চাপ নেয়ার মতো দৃঢ়তা ওই বয়সে গড়ে উঠে না।

ফলে ওই পরীক্ষাটি হয় শিশুদের ওপর মানসিক নির্যাতনের শামিল। এই বাড়তি পরীক্ষাটি চাপিয়ে দেয়ার যথাযথ কোনো কারণও কেউ বলতে পারেন না, মাঝখান থেকে লাখ লাখ শিশুর শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে পরীক্ষা-কোচিং-গাইড বইয়ের চক্রে। এরপর শিক্ষানীতি ২০১০-এ বলা হলো যে, প্রাথমিক স্তর হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অষ্টম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তখন প্রশ্ন উঠল এই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা আর থাকছে না, গত বছর এটি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। এ বছরও বাতিল হলো এই পরীক্ষাটি।

কদিন আগেও সমাপনী পরীক্ষা উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ (কেবিনেট) সিদ্ধান্ত দিলেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বাতিল করা হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকের সমাপনী বলতে আমাদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তারপরই পরীক্ষা। যেহেতু নানা কারণে এখনো সব অষ্টম শ্রেণির স্কুল আমাদের আওতায় আসেনি, তাই ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলেই এটা করব’। আমরা জানি না কবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসবে। তার আগ পর্যন্ত যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই এই পরীক্ষা বহাল থাকবে, থাকবে শিক্ষার্থীদের ওপর এই অনাবশ্যক চাপ।

এ বছর প্রায় ৩১ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অংশ নিয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৭ জন। অর্থাৎ দেড় লাখের মতো শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। সংশ্লিষ্টদের কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই এখন অবধি। আমরা মনে করি, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাতেই লাখ দেড়েক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি হেলাফেলার বিষয় নয়। সংশ্লিষ্টদের উচিত এর কারণ অনুসন্ধান করা এবং তা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে- এ নিয়েও ভাবনা দরকার। আমরা চাই, দ্রুত প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বিষয়ে দোদুল্যমানতার অবসান ঘটানো হোক। শিক্ষানীতির আলোকে অষ্টম শ্রেণিতেই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কোমলমতি শিশুদের উপর্যুপুরি পরীক্ষার জাঁতাকল থেকে মুক্তি দেয়া হোক।

সূত্র: সমকাল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037589073181152