বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়, নিশ্চুপ বাইডেন

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত থাকছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থাকায় এ ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছেন তিনি।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধ করা, ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে গত মার্চের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছেন ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা। সর্বপ্রথম আন্দোলন শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরে তা অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।

গত শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে ভিয়েতনামে মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় আকারের আন্দোলন শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থানের জন্য ক্যাম্পাস চত্বরে অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে বসবাসও করছেন।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে এক ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বাইডেনের প্রতিক্রিয়া জানতে চায়েছিলেন। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘যারা প্রতিবাদের নামে ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন, আমি তাদের নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই বিদ্বেষ মোকাবিলা করার জন্য ইতোমধ্যে সরকার কিছু কর্মসূচিও নিয়েছে।’

‘কিন্তু একই সঙ্গে আমি নিন্দা জানাচ্ছি তাদের প্রতিও, যারা বুঝতে চাইছে না যে বর্তমানে ফিলিস্তিনিরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’

তারপর থেকে এখন পর্যন্ত এ ইস্যুতে আর কিছু বলেননি তিনি।

চলতি বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৮১ বছর বয়স্ক বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন, তা একপ্রকার নিশ্চিত। বাইডেনের এই নিশ্চুপ অবস্থা নজর এড়ায়নি ট্রাম্পেরও।

৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প বুধবার এক নির্বাচনী প্রচারণা সভায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘দেশজুড়ে বর্তমানে ব্যাপক উত্তেজনা শুরু হয়েছে আর তিনি (বাইডেন) কিছুই বলছেন না।’

ওই সভায় অবশ্য ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলপন্থিদের ওপর নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের উচিত ক্যাম্পাস থেকে অবিলম্বে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করা এবং কট্টরপন্থা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষিপ্ত পাগল’ এবং ‘হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

ভারসাম্যনীতিতে বাইডেন?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি ইতোমধ্যে কঠোর হওয়া শুরু করেছে প্রশাসন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইসিএলএ) ইসরায়েলপন্থি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘাতও হয়েছে।

বুধবার এক ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র ক্যাথরিন জেন-পিয়েরে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের ‘একটি ক্ষুদ্র অংশ’ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

‘শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজেদের নিরাপদ বোধ করার অধিকার রয়েছে, একটি নির্ঝঞ্ঝাট পরিবেশে পড়াশোনা করার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া ইসরায়েলের প্রতি বিদ্বেষ এবং ঘৃণা দমনের জন্য যদি আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হয়, তাহলে আমরা তা করব।’

পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘আবার এটাও সত্য যে গাজার পরিস্থিতির খুবই হৃদয়বিদারক এবং আমাদের প্রেসিডেন্ট সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স কিনা। এই অধ্যাপক মনে করেন, আসনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন বাইডেনের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

‘শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলন বাইডেনকে বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে। কারণ তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম এবং আরব-আমেরিকানরাও। ২০২০ সালের যে নির্বাচনে জয়ী হয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই নির্বাচনে তার জয়ে এই তরুণ প্রজন্ম, মার্কিন মুসলিম এবং আরব-আমেরিকানদের বিশাল ভূমিকা ছিল।’

‘যেহেতু চলতি বছরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী, তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা অবস্থান এড়াতে চাইবেন। এটা স্বাভাবিক।’

২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবারের নির্বাচনেও মুখোমুখী দ্বৈরথ হবে বাইডেন-ট্রাম্পের মধ্যে।

কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দুই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা-গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে ট্রাম্পের থেকে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন বাইডেন।

আপাতদৃষ্টিতে সুখবর মনে হলেও সত্যিকার অর্থে এটি বেশ উদ্বেগজনক। কারণ ২০২০ সালের নির্বাচনের আগেও এমন একটি জরিপ চালিয়েছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সেই জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ২৩ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন বাইডেন।

সূত্র : এএফপি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি - dainik shiksha সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর - dainik shiksha ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী - dainik shiksha ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে - dainik shiksha ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি - dainik shiksha শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041661262512207