বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আছে, রয়েছে বিজ্ঞানাগারও। কাগজে-কলমে বিজ্ঞানাগার থাকলেও কিন্তু কাজে নেই। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা শেখা তো দূরের কথা কোনো দিন বিজ্ঞানের কোনো যন্ত্রাংশ দেখতেই পায়নি। কারণ, সরকারের দেওয়া বিজ্ঞানাগারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি আট বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে প্যাকেটবন্দি।

সম্প্রতি পঞ্চগড় সদর উপজেলার কাজীপাড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোমকিন আলম মুকুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এ অনিয়মের চিত্র। বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে রাখায় এসব যন্ত্রাংশ এখন আর ব্যবহার করা যাবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কাজীপাড়া। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী ও দরিদ্র। আশপাশে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় তাদের সন্তানদের মাধ্যমিক পাঠ চলে গ্রামের কাজীপাড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে এমিওভুক্ত হয়। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে আটজন শিক্ষক ও দুজন কর্মচারী রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক হলেও নিয়মিত ক্লাস করে তার অর্ধেকেরও কম। বিজ্ঞানাগার না থাকায় শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগ নিতে আগ্রহী হয় না। গত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাত্র পাঁচজন অংশ নেয়। জানা যায়, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয় বিদ্যালয়টিতে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তোমকিন আলম মুকুল এসব জিনিসপত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে রাখেন। তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় আট বছর। এত দিনে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা না পেরেছে কোনো কিছু শিখতে, না পেরেছে জিনিসগুলো দেখতে। কোনো দিন তা বিদ্যালয়ে এনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কাজে লাগানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। বিদ্যালয় প্রধানের এমন দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। গত এসএসসি পরীক্ষায় ওই বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৫ জনসহ ২০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ জন। তবে তাদের ফল সন্তোষজনক নয়।

সরবরাহ করা যন্ত্রপাতি ও উপকরণের মধ্যে রয়েছে তিনটি টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, বিপি মেশিন, কঙ্কাল, বাইনোকুলার, ডিজিটাল পাল্লা, রাসায়নিক পদার্থসহ শতাধিক উপকরণ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী জানায়, বিজ্ঞানের কোনো জিনিসপত্র আমরা কোনো দিন দেখিনি। আছে কি না তাও আমরা জানি না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়টিতে দিন দিন লেখাপড়ার মান কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে দক্ষ করে এগিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই প্রতিষ্ঠানটির। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোমকিন আলম মুকুল স্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ে কোনো বিজ্ঞানাগার নেই। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে জিনিসগুলো বাড়িতে নিয়ে রেখেছি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রামাণিক জানান, অবকাঠামো না থাকলে এসব উপকরণ সরবরাহ করার কথা না। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের তালিকা হয়তো মানা হয়নি। এত দিনে হয়তো অনেক উপকরণ ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028979778289795