প্রবাসে কোনো বাংলাদেশি মারা গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিনা ভাড়ায় সেই লাশ পরিবহন করে দেশে নিয়ে আসে। কিন্তু একেবারে বিনা ভাড়ায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থার মাধ্যমে প্রবাসীদের লাশ পরিবহনে আপত্তি জানিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। লাশ পরিবহনের ক্ষেত্রে খরচ চেয়ে শিগগিরই বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শতশত প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ বিনা ভাড়ায় পরিবহন করে থাকে বিমান। মানবিক বিষয়গুলোতে বিমান সবসময়ই অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু এটা বেশিদিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
মন্ত্রণালয় আর ও বলছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তো প্রবাসীদের জন্য ফান্ড আছে। প্রবাসে কোনো বাংলাদেশি মারা গেলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সেই ফান্ড থেকে লাশ পরিবহনের জন্য ন্যূনতম একটা ভাড়া বিমানকে দিতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় শিগগিরই একটা চিঠি পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত এক বছরে প্রবাসীদের কী সংখ্যক লাশ পরিবহন করেছে, কত খরচ হয়েছে- তা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তাদের দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া একটি লাশ পরিবহন করতে কত খরচ হয় এবং এ সংক্রান্ত কী কী কাগজপত্র তাদের আছে তাও মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। এগুলো পাওয়ার পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
বিমানের একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন সংকটে, যুদ্ধাবস্থায় থাকা দেশগুলো থেকে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশিদের দ্রুততম সময়ে দেশে ফিরিয়ে আনারও কাজ করে থাকে বিমান। পাশাপাশি প্রবাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের মরদেহ বিভিন্ন গন্তব্যস্থল থেকে বিনামূল্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেশে বয়ে আনছে বিমান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাটি বিনা ভাড়ায় ৮৬১ জন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকের লাশ দেশে এনে স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়। ওই বছর আবুধাবি থেকে ২৭, দোহা থেকে ৮, দাম্মাম থেকে ৯৩, দুবাই থেকে ৫৯, কুয়ালালামপুর থেকে ৬২, জেদ্দা থেকে ৩২, কুয়েত থেকে ৯১, মাস্কাট থেকে ১৭৩ ও রিয়াদ থেকে ৩১৬ জন প্রবাসীর লাশ দেশে আনে বিমান।
কাতারে আগে কোনো প্রবাসীর মৃত্যু হলে মরদেহ দেশে নেয়ার জন্য নিজেরাই বা কাতারি মালিককে খরচ বহন করতে হতো। এখন কাতার প্রবাসীদের মরদেহও বিনা পয়সায় বহন করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। শুধু কাতার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মৃত ব্যক্তির একটি সার্টিফিকেট নিয়ে আসলেই বিনা খরচে দেশে পরিবারের কাছে মরদেহ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বলে জানান কাতারে নিযুক্ত বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার।