মাদরাসা থেকে স্থানান্তরিত শিক্ষকদের এমপিও দুর্গতি

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

করোনা নামের ক্ষুদ্র ভাইরাসটি মানুষের সব সুখ কেড়ে নিয়েছে। মানুষের জীবন প্রবাহ থমকে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা আজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত। তবু জীবন থেমে নেই। জীবনের প্রয়োজনে সৃষ্টির সূচনা থেকে মানুষ প্রকৃতির সাথে অদম্য লড়াই করে ঠিকে আছে। গত শতাব্দীতে মানুষ প্রকৃতিকে এক রকম বশ মানিয়ে ফেলেছিল। এই শতাব্দীতে এসে করোনা নামের এক অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে মানুষের সব অর্জন হেরে যেতে বসেছে। করোনা বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতির হাতে মানুষ আজও অসহায়। 

করোনার কারণে মানুষের মনে এখন শান্তি নেই। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মনে অশান্তি ও দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। জীবন ও জীবিকার তাগিদে তাদের কষ্টের সীমা নেই। অতি সঙ্গত কারণে আমাদের দেশের বেসরকারি শিক্ষক সমাজ এই দুই শ্রেণির অন্তর্গত। তাই করোনাকালীন নানা দুর্ভোগের মধ্যে তাদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যে সকল শিক্ষক সাম্প্রতিক সময়ে মাদরাসা থেকে স্থানান্তরিত হয়ে স্কুল কিংবা কলেজে যোগদান করেছেন, তারা মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে অনলাইন রিলিজ অনুমোদন করে অনলাইন এমপিও আবেদনে সেটি সংযুক্ত করতে পারছেন না। ফলে তারা নতুন কর্মস্থলে এসে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। পুরনো এমপিও থেকে তাদের নাম কর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনলাইন রিলিজ অনুমোদন জটিলতার কারণে তারা নতুন করে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। আজ থেকে প্রায় ৬-৭ মাস আগে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করলেও রিলিজ জটিলতার কারণে এমপিও না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে তারা খুবই কষ্টের মধ্যে আছেন।

জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ মোতাবেক অনেক শিক্ষক প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নিয়ে মাদরাসার সহকারী শিক্ষক থেকে স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে বিধি মোতাবেক নিয়োগ লাভ করে যোগদান করেন। গত জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইএমআইএস আপডেট দেবার সময় প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনকারীদের জন্য অনলাইন রিলিজ সিস্টেম চালু করা হয়। এ ক্ষেত্রে মাদরাসা থেকে স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে স্থানান্তরিত হয়ে এমপিওভুক্ত হবার ক্ষেত্রে তথ্য স্থানান্তরের জন্য ইআইএমএস ও মেমিসের মধ্যে একটি লিংক থাকা দরকার। সেটি না থাকায় গত ছয় মাস থেকে মাদরাসার স্থানান্তরিত শিক্ষকরা এমপিওর জন্য অনলাইন আবেদন করতে পারছেন না।

মাদরাসা থেকে স্কুলে স্থানান্তরিত হয়ে যে সকল শিক্ষক গত জানুয়ারিতে এমপিওর জন্য অনলাইন আবেদন করেছেন, তাদের আবেদনও ইএমআইএস আপডেটের কারণে বাতিল হয়ে গেছে। এ রকম কয়েকশ শিক্ষক জটিলতার মধ্যে পড়ে পূর্বতন এমপিও হারিয়ে পুনরায় এমপিওভুক্ত হতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে দারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে এই করোনা মহামারির দুর্দিনে কেউ তাদের কষ্টের বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। তারা উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস, ডিডি অফিস এমনকি ডিজি অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না। তারা সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যান্য লোকজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

এমতাবস্থায় ইএমআইএস ও মেমিসের মধ্যে অতি সত্বর একটি লিংক স্থাপন করে রিলিজ অনুমোদন স্থানান্তরের বিষয়টি সহজতর করে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বর্তমানে কর্মরত প্রতিষ্ঠানে দ্রুত এমভুক্তির অনলাইন আবেদন করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করি। অন্তত তারা যাতে আগামী এমপিওতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, সে ব্যাপারে মাদরাসা অধিদপ্তর ও মাউশিকে যুগপৎ ভূমিকা রাখার সবিনয় অনুরোধ করি।

লেখক : মুজম্মিল আলী, অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025157928466797