মায়েরাই নেবেন প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রাথমিক স্তরের প্রায় দেড়কোটি শিশুর পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন এই উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মায়েদের সম্পৃক্ত করে তাদের দিয়েই পাঠদান ও পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুঠোফোনে শিক্ষকদের সহায়তা ও গাইডলাইনে ঘরে বসে মায়েরাই নিজ নিজ সন্তানকে পড়াবেন। জুলাই মাসের শুরুতে শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে মায়েদের কাছে পাঠাবেন। মায়েরা সেই প্রশ্নপত্রের আলোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সন্তানের পরীক্ষা নেবেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি থেকে খাতা সংগ্রহ করাবেন শিক্ষকরা। মূল্যায়নের দায়িত্ব থাকবে শিক্ষকদেরই। তবে, এই পরীক্ষা বা মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক নয়, বা এর মাধ্যমে পাস-ফেলের কোনো বিষয় নেই বলেও জানা গেছে। 

নতুন এই উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন সাংবাদিকদের  বলেন, আমাদের স্লোগান হলো- 'মায়েরাই প্রথম শিক্ষক'। করোনার এই দুর্যোগের দিনে আমরা সারাদেশের এক কোটি ৪০ লাখ মাকে শিক্ষকতার দায়িত্ব দিতে চাই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সিলেবাস ও পাঠ ঠিক করে দেবেন। মায়েরা বাসায় পড়াবেন। শিক্ষকরা মুঠোফোনের মাধ্যমে পড়া দেওয়া-নেওয়া করবেন। এরপর শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে পাঠালে মায়েরা পরীক্ষা নিয়ে খাতা শিক্ষকদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। প্রতি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করা হবে। তারাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে মায়েদের কাছ থেকে খাতা সংগ্রহ করে শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দেবেন। এভাবে এ বছরের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করা হবে শিক্ষার্থীদের। এটা চতুর্থ ও ৫ম শ্রেণির জন্য।

'নিরক্ষর মায়েদের ক্ষেত্রে কী হবে'- প্রশ্নের জবাবে সচিব সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ক্ষেত্রে শিক্ষকরাই মুঠোফোনে পাঠদান করাবেন ও পড়া নেবেন। মায়েরা শুধু সন্তানের তদারকি করবেন।

তবে,  এই পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা। পাসফেল বা প্রমোশনের বিষয় নেই। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত ১৫ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা আগামী ৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটিও এখনও অনিশ্চিত। তাই শিক্ষার্থীদের মায়েদের কাজে লাগিয়ে তাদের মাধ্যমে পাঠদান ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এদিকে, বিদ্যালয় কবে খোলা হবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এ পরীক্ষা বাতিল ও স্থগিত করা হয়নি। ফলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে হবে। তবে কীভাবে সম্ভব, তা নিয়ে মাঠপর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারাই সন্দিহান। যদিও এ নিয়ে তারা মুখ খুলছেন না।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, 'এ বছর এই সুযোগে শিশুদের ওপর থেকে এই পরীক্ষাটি তুলে দেওয়া উচিত। পরীক্ষাটির কারণে শিশুরা নোট-গাইড ও কোচিং বাণিজ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এতে শিক্ষার বাণিজ্যায়ন বাড়ছে। এ ছাড়া এ পরীক্ষাটি শিশুদের ওপর একটি বোঝা।'

শিক্ষা বিষয়ক এনজিও মোর্চার প্রধান গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয় তখন এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে স্বাগত জানান এবং পরীক্ষাটি চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। 

গত দুই বছর ধরে তিনি এই পরীক্ষার বিপক্ষে বলছেন। গত বছর এটিএননিউজের এক টকশোতে দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমানের করা এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি রাশেদা কে চৌধুরী।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030379295349121