মেডিক্যালে প্রথম হওয়া রাফছানের ফেসবুক আইডি নেই

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

পড়ালেখার বিষয়ে ছিলেন অতি আগ্রহী। প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো করার ইচ্ছা তাড়িয়ে বেড়াত তাঁকে। পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে মন খারাপ করে বসে থাকতেন। এসএসসিতে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে এইচএসসির বই, এইচএসসি পড়ার সময় মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার পড়া পড়তেন। এ যুগের ছেলে হয়েও ব্যবহার করতেন না স্মার্টফোন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টও নেই তাঁর। 

বলছি মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষায় সারা দেশে প্রথম হওয়া রাফছান জামানের কথা। আজ রোববার দুপুরে সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হন তিনি।

নগরের হালিশহর কে-ব্লকে মা-বাবা ও এক বোনের সঙ্গে থাকেন তিনি। তাঁর বোনও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেক্টে থেকে দ্বিতীয় হয়েছেন। তাঁর বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান সিটি গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন রাফছান। দুটিতেই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি জিপিএ–৫ পেয়েছেন। 

আজ বিকেলে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রাফছান জামানের বাসার নিচতলায় মিষ্টি ও ফুল নিয়ে অপেক্ষায় বন্ধু-সহপাঠীরা। কিছুক্ষণ পর রাফছান নিচে আসেন। মুখে চওড়া হাসি। বুকে টেনে নিলেন সবাইকে। বাসায় নিয়ে মিষ্টিমুখ করালেন। তারপর সফলতার নানান গল্প শোনান তিনি।

রাফছান বলেন, ‘কল্পনাও করিনি ১ নম্বর হব। কারণ, পরীক্ষা দিয়ে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। মনে করেছিলাম, মেডিক্যালে হবে না। এ জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার পড়া পড়ছিলাম। এর মধ্যেই আজকে বন্ধুদের কল। আমি মেডিক্যালে প্রথম হয়েছি। এই খুশি কোথায় রাখি। সব কৃতিত্ব মা-বাবা ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের।’ 

নিজের পড়ালেখার বিষয়ে বলতে গিয়ে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। কারণ, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি এ যুগেও কোনো স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন না বলে জানান তিনি। খুব বেশি প্রয়োজন হলে তখন স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন। করোনার সময় অনলাইনে ক্লাসের প্রয়োজনে বাবার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া তাঁর কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টও নেই বলে জানান রাফছান।

নিউরোসায়েন্স নিয়ে তিনি পড়াশোনা করবেন। এ বিষয়ে পড়ার কারণও হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট এটি। কারণ, হিউম্যান বডির সবকিছুর সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত। আমি নিউরোর ওপর একজন বড় বিশেষজ্ঞ হতে চাই। দেশের মানুষকে বাঁচাতে চাই। দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।’

রাফছান বলেন, ‘মেডিক্যালে পড়াটা খুব বেশি আগ্রহ ছিল। যার কারণে কলেজ লাইফের প্রথম থেকেই মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস ফলো করতাম। সময় পেলে পড়তাম। সময় নষ্ট করিনি। সময় নষ্ট হবে বলে স্মার্টফোন ব্যবহার করতাম না। আমার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টও নেই।’ 

মেডিক্যাল ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রাফছান বলেন, ‘পরিশ্রম আর সময় অপচয় না করলে মেডিক্যালে পড়া কোনো বিষয় না।’ 

এ কে এম শামসুজ্জামান বলেন, ‘কোনো দিন তাকে বলতে হয়নি, বাবা পড়তে বসো। নিজে নিজে পড়াশোনা করত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় সপ্তম শ্রেণির বই পড়ত। ছুটির দিনগুলোতেও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত।’

শামসুজ্জামান আরও বলেন, ‘স্মার্টফোনও খুব প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করত না। এখন ছেলে মানুষের মতো মানুষ হবে—সেই আশাই থাকবে।’

রাফছানের মা কাউছার নাজনীন মনি বলেন, ‘রান্নাবান্নার ফাঁকে ফাঁকে ছেলের পড়ালেখার খোঁজখবর নিতাম। যেকোনো বিষয় আমার সঙ্গে শেয়ার করত সে। আশা করি, রাফছান ডাক্তার হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।’ 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল - dainik shiksha ঘুষকাণ্ড চাপা দিয়ে স্কুল অডিটে মনকিউল শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার, জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার - dainik shiksha শিক্ষা একটি মৌলিক মানবাধিকার, জাতি গঠনের প্রধান হাতিয়ার মাউশি কমকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে লিয়াকত-অহিদুর - dainik shiksha মাউশি কমকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃত্বে লিয়াকত-অহিদুর নবম-দশমের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আপলোডের নির্দেশ - dainik shiksha নবম-দশমের পাঠ্যবইয়ের চাহিদা আপলোডের নির্দেশ ক্ষমতায় গেলে ফরম থেকে কে কোন ধর্মের সেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে - dainik shiksha ক্ষমতায় গেলে ফরম থেকে কে কোন ধর্মের সেই প্রশ্ন তুলে দেয়া হবে ডাকসুতে প্যানেল বাতিলসহ ৮দফা প্রস্তাবনা ইউআরআই‘র - dainik shiksha ডাকসুতে প্যানেল বাতিলসহ ৮দফা প্রস্তাবনা ইউআরআই‘র কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002561092376709