মোদিকে হারাতে ভারতের রাজনীতিতে নতুন জোট ‘ইনডিয়া’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

জল্পনা-কল্পনা চলবে না, এটা বলা মূর্খামি। কিন্তু জোট হয়েছে বলেই বিজেপি আগামী লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাবে এটা বলাও এই মুহূর্তে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপাতভাবে মনে হবে নতুন যে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমীকরণ তা নিশ্চিত বিজেপিকে ধাক্কা দেবে। খেয়াল করে দেখবেন, ধাক্কা দেবে বলেছি, নিশ্চিহ্ন করে দেবে এ অতি বড় বিজেপিবিরোধী লোকজনের পক্ষেও সম্ভব নয়। তবুও বিরোধী এই জোট জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই কিছুটা হলেও যে বিজেপিকে উদ্বেগে ফেলেছে। সেটা বোঝা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে শাসকদের এনডিএ জোটের অতি তৎপরতা দেখে। তড়িঘড়ি তাদের বৈঠক, গরম গরম বিবৃতি দেখলে বোঝা যায় যে মুখে তর্জন গর্জন করলেও শাসক শিবির নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচন নিয়ে চাপে আছে।

দেশের মিডিয়ার বড় অংশ বলতে শুরু করেছে, চব্বিশ সালের নির্বাচন হতে চলেছে নরেন্দ্র মোদি বনাম সবে সবে গড়ে ওঠা ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে। এটা এখন সারা দুনিয়া জেনে গেছে ছাব্বিশ দলের জোট ব্যাঙ্গালোরে বিরোধী সম্মেলনে গড়ে উঠেছে, মূলত আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে। যার নাম হয়েছে , ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স। সংক্ষেপে ইন্ডিয়া।

এটা জোট নয়, বরং এক রামধনু মঞ্চ, রেইনবো কোয়ালিশন। এখানে কে নেই! কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আরএসপি, কেরল মুসলিম লিগ, ডিএমকে, লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল, নীতিশ কুমারের দল, শিবসেনার একাংশ, খন্ডিত এনসিপি, ফারুক আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স, মেহবুবা মুফতির পিডিপি ইত্যাদি বাম দক্ষিণ পন্থার বিচিত্র মহামঞ্চ। যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুদিন আগেও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, তারাও কোন জাদুমন্ত্রে এই মহ যজ্ঞে শামিল হয়ে বৈঠক শেষে হাসি হাসি মুখে স্টেজে দাঁড়িয়ে মিডিয়াকে পোজ দিচ্ছেন। সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ।

আসলে আলাদা আলাদা কারণ হলেও প্রত্যেক দলের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাই পরস্পরকে কাছে টেনেছে। তাও এই মহামঞ্চ গড়ে তোলার পেছনে মূল কৃতিত্ব নিশ্চিতভাবে কংগ্রেসের। ‘ইন্ডিয়ার’ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাও দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাক্ষে। এবং এনসিপি নেতা জিতেন্দ্র সহয়াদ জানিয়েছেন যে, ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স নামটিও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দিয়েছেন।

নীতিশ কুমারের নাকি প্রাথমিকভাবে আপত্তি ছিল এই ইন্ডিয়া নামে। তিনি চেয়েছিলেন যে জোটের নাম হোক ইন্ডিয়ান মেইন ফ্রন্ট বা মেইন অ্যালায়েন্স। বামেদের ইচ্ছে ছিল, সেভ ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স বা উই ফর ইন্ডিয়া। কিন্তু সব ধরনের প্রস্তাবকে নাকচ করে রাহুল গান্ধীর নাম জবরদস্ত সব দলগুলোর মেনে নেওয়াতে এও পরিষ্কার যে আগামী নির্বাচনে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোাদবিরোধী প্রধান মুখ। আপাতত রাহুল গান্ধীবিরোধী যাবতীয় কুকথা যে বিজেপির হাত শক্ত করছে তা অন্তত দেশের বড় অংশের মানুষের কাছে স্পষ্ট। এটা বুঝতে মমতা ব্যানার্জি বা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভুল করেননি বলেই তাদের হাজার মনোকষ্ট সত্ত্বেও রাহুল গান্ধীকে জোটের অবিসংবাদী নেতা বলে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

অনেকে বলছেন কেরল ছাড়া বামেদের কোনো শক্তি নেই। অর্থহীন কথা। বিজেপির মূল শক্তি তো আরএসএসের কট্টর হিন্দুত্ববাদী দর্শন। তার বিপক্ষে সারা দেশে বামেদের তত্ত্ব একমাত্র ইন্ডিয়া জোটকে তাত্ত্বিক দিক দিয়ে অক্সিজেন দিতে পারে। বিরোধী ছাব্বিশ দলের জোটের মধ্যে বামেরা ছাড়া আর জেডি স্তালিনের নেতৃত্বাধীন ডিএমকে, লালুপ্রসাদ যাদবের আরজেডি ও ওমর আবদুল্লাহর পিপলস কনফারেন্স মোটের ওপর বিজেপিবিরোধী। অন্য দলগুলো কোনো না কোনো উপায়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়।

নানা কারণে তাদের ভোট ব্যাংকের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বিজেপির উগ্র মনুবাদী রাজনীতির বিপক্ষে। ফলে ধর্মনিরপেক্ষ জোটে শামিল হতে না পারলে সমূহ বিপদ, এই আশঙ্কা নিয়েই তারা বাধ্য হয়ে এখন কংগ্রেসকে পরম মিত্র বলে মানতে রাজি হয়েছেন। কংগ্রেস সেটা জানে। রাহুল গান্ধী এখন অনেক পরিণত। রাহুলের নেতৃত্বে ভারত জোড়ো যাত্রার সুফল ফলেছে গত কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে। দক্ষিণ ভারতে বিজেপির অবস্থা খারাপ। ছত্তিসগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা রাজ্যেও বিজেপি কিঞ্চিৎ কোণঠাসা। মনিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বাইরে থেকে যত ভালো দেখাক, বাস্তবে ছবি অত উজ্জ্বল নয়। ধর্মীয় মেরুকরণ আর উগ্র জাতীয়তাবাদী হুঙ্কার দিয়ে কতদিন আধিপত্য বজায় রাখা যাবে তা নিয়ে বিজেপি শিবিরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ফলে এই সময় শক্তিশালী বিরোধী জোটের দরকার ছিল। গণতন্ত্রের স্বার্থে। গণতন্ত্রে বহু স্বর ছাড়া একমাত্রিক কণ্ঠের মূল্য নেই। ইন্ডিয়া জোট অথবা মঞ্চ আপাতত নরেন্দ্র মোদির স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতার কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আগামী নির্বাচনে কে জিতবে, গণতন্ত্র, বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি না চরম দক্ষিণপন্থা, তা এখনই বলা অসম্ভব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025651454925537