যার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে নিষিদ্ধ ধর্মের বই

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

১৯৫০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া রাজ্যে নিয়ম ছিল স্কুলে সব ছাত্রদের বাইবেল পড়তেই হবে। এর প্রতিবাদ জানাতে এক ছাত্র একদিন ক্লাসে বাইবেলের পরিবর্তে পবিত্র কোরআন পড়তে শুরু করেন। এলেরি শেম্প নামের ঐ ছাত্রের মনে হয়েছিল, তিনি যেহেতু প্রচলিত ধর্মে বিশ্বাস করেন না তাই তাকে কেন বাইবেল পড়তে বাধ্য করা হবে? যেখানে আমেরিকার সংবিধানে রাষ্ট্র ও ধর্মকে সম্পূর্ণ পৃথক করা হয়েছে সেখানে অন্য ধর্ম বাদ দিয়ে শুধু খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থ পড়ানোটা সংবিধান লঙ্ঘন।

ব্যাপারটা এলেরি শেম্পকে এতোটাই পীড়া দিতে লাগলো যে তিনি একটি মামলা করে বসেন। আর সেই মামলার রায়ের ফলে পেনসিভেনিয়ার স্কুলে বাইবেল পড়ানো বন্ধ হয়েছিল। আদালতের সেই রায় এতোটাই প্রভাব ফেলেছিল যে দেশের রাজনীতি ও সংবিধানের একেবারে কেন্দ্রস্থলে আঘাত হেনেছিল। সেই প্রশ্নটি ছিল রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণ।

ফিলাডেলফিয়া শহরের উপকণ্ঠে খুব সাধারণ এক পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল এলেরি শেম্পের। তার বাবা ছিলেন একজন ছোটখাটো ইলেকট্রনিকস ব্যবসায়ী। তারা ছিলেন ইউনিটারিয়ান-খ্রিস্টান ধর্মের একটি উদারপন্থি সমপ্রদায়ের অনুসারী। সেদিনের সেই প্রতিবাদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে এলেরি বলেন, ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসের এক               সকালে তিনি একজনের কাছ থেকে ধার করা এক কপি পবিত্র কোরআন হাতে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তখন আমি পবিত্র কোরআন বা ইসলাম সম্পর্কেও কিছুই জানতাম না। আমি শুধু একটা জিনিসই দেখাতে চেয়েছিলাম যে বাইবেল ছাড়াও পৃথিবীতে আরো পবিত্র গ্রন্থ রয়েছে। আমার এই বিরোধী মনোভাবের কারণে, শিক্ষক আমাকে স্কুলের অধ্যক্ষের কাছে পাঠালেন। তিনিও অবাক হয়ে গেলেন। বললেন, দ্যাখো, এটা একটা সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপার। এই স্কুলে ১৩শ ছাত্র-ছাত্রী আছে, তারা সবাই সম্মান দেখাচ্ছে। তুমি কেন পারবে না?

আমি জবাব দিলাম, এখানে একটা নীতিগত প্রশ্ন আছে যা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যক্ষ ভাবলেন, আমি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত একটি তরুণ। তিনি আমাকে স্কুলের মনোবিজ্ঞানীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। তবে এই সময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমার বাবা-মা।

১৯৬৩ সালের ১৭ই জুন সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় দিলেন। এই রায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের আইন বদলে গেল। কারণ সব রাজ্যে স্কুলে বাইবেল পড়া প্রার্থনার রীতি ছিল না। প্রায় ৩০টি রাজ্যে কোনো না কোনো আইনে এই রায়ের প্রভাব পড়েছিল। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সব ধরনের ধর্মবই পড়ানো। এলেরির স্কুল অবশ্য পরে তাকে তাদের সেরা গ্রাজুয়েটদের একজন হিসেবে হল অব ফ্রেমে স্থান দিয়েছে তাকে।-বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028390884399414