রাজধানীর উত্তরায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ছিনতাই হওয়া সোয়া ১১ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ছিনতাই হওয়া চারটি বক্সের মধ্যে তিনটি বক্স উদ্ধার করেছে ডিবি। এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের দু’জন পরিচালক ও গাড়িচালকসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল
ডিবি পুলিশ বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। ছিনতাইকারীরা অনেক আগে থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাড়িটি মিরপুর-১২ নম্বর থেকে রওনা দেয়। উত্তরায় যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা গাড়িটি প্রতিরোধ করে। টাকা নিয়ে যাওয়া গাড়িতে ছয়জন লোক ছিল। ছিনতাইকারীরা ছয়জনকে মারপিট করে টাকার চারটি বক্স নিয়ে গাড়িতে পালিয়ে যায়। চারটি বক্সে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল।
পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের টিম সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় টহল, থানা ও ডিবি পুলিশ টাকা উদ্ধার ও ছিনতাইকারীদের ধরতে কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে উত্তরা এলাকা থেকে পালানোর সময় তিনটি বক্সসহ সাতজকে আটক করা হয়।
ছিনতাইকারীদের হাতে অস্ত্র ছিল না
টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা পরিকল্পিত জানিয়ে ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের টাকা আনা-নেওয়ার বিষয়টি ছিনতাইকারীরা অনেক দিন ধরে লক্ষ্য করছিল। কিন্তু ছিনতাইকারীদের হাতে ছিল না কোনো অস্ত্র।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছি। মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের দুজন পরিচালসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে।
ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই
উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন ছিনতাইকারীরা ব্যাংকের টাকা ছিনতাইয়ের সময় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছিল। ছিনতাই করতে আসা গাড়িটিতে ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন বলে ভুক্তভোগীরা আমাদেরকে জানিয়েছেন। তবে তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ছিনতাইকারীরা ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন।
সকালে যা ঘটেছিল
পুলিশ বলছে, মানি প্ল্যান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানির ঢাকা মেট্রো-চ-৫১-৬৫৭৯০ সিরিয়ালের একটা নোয়া গাড়িতে মিরপুরথেকে বের হয়ে সাভার ইপিজেডের দিকে যাচ্ছিল।
কোম্পানির ভাষ্য মতে, গাড়িটিতে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিল। গাড়িটি মিরপুর ডিওএইচএস পার হয়ে মেট্রোরেলের নিচ দিয়ে দিয়াবাড়ি মেট্রো স্টেশন পার হয়ে ১১ নম্বর ব্রিজ হয়ে যখন সামনের দিকে যাচ্ছিল তখন পেছন থেকে একটি কালো কালারের মাইক্রোবাস এসে ডান থেকে বামে চাপ দিয়ে হর্ন দেয় ও গাড়িটির গতিরোধ করে।
প্রথমে তারা হর্ন দেয়া নিয়ে কোম্পানির গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গে ঝগড়া করে। এরপর গাড়ির ড্রাইভার এবং কোম্পানির সুপারভাইজারকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। ছিনতাইকারী দলের একজন টাকার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে। তিনি গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে সামনে দাঁড় করায়। ওই সময় গাড়িটিতে কোম্পানির একজন ম্যানেজার ছিলেন। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে এবং গাড়িতে থাকা টাকার চারটি ট্রাঙ্ক নামায়, কালো রংয়ের আরেকটি হায়েস গাড়িতে করে তারা সেই ট্রাঙ্ক নিয়ে চলে যায়। গাড়িটি রাজউকের ভবনের পাশ দিয়ে ১৮ নম্বর সেক্টরের রাস্তা হয়ে সামনে থেকে ইউটার্ন করে ১০নং সড়ক হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।ছিনতাইয়ের এই ঘটনায় তারা ৯৯৯ এ কল করে বিস্তারিত জানায়। ৯৯৯ এর মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়।
কোম্পনিগুলোর টাকা স্থানান্তরে সতর্ক হওয়া উচিত
পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম বলেন, যেসব কোম্পানি এরকম টাকা স্থানান্তর করেন বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা বুথে স্থানান্তর করেন তাদের আরো সতর্ক হওয়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কেউ টাকা স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে বা ট্রিপল নাইনে ফোন করে অভিযোগ করলে আমরা সহায়তা দিয়ে থাকি, পুলিশ বা থানা পুলিশ সবসময় প্রস্তুত।