বাংলাদেশের বগুড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয়ে বিচারকের মেয়ের শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার না করা নিয়ে সমালোচনা চলছে। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসামিনের মেয়েকে নিয়ে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিচারক রুবাইয়া ইয়াসামিনের মেয়ে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করবে না বলে জানিয়ে দেয়।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে ডেকে আনা হয় কয়েকজন ছাত্রী ও তাদের অভিভাবককে। এ সময় মেয়ের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে তার পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন শিক্ষার্থীদের দিয়ে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করার দরকার কী?
বিশ্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় জাপানের সুনাম রয়েছে। আমরা যদি জাপানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ঐতিহ্যের দিকে তাকাই তাহলে পাওয়া যাবে ভিন্ন চিত্র। জাপানে গেলে পর্যটকরা প্রথম যে জিনিসটি লক্ষ্য করেন তা হলো সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যেখানে খুব কমই ডাস্টবিন আর পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছে। তাহলে এর পেছনের রহস্য কী?
ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য শিক্ষার্থীরা ব্যাগ নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তবে তারা শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে। কারণ শিক্ষক তাদের পরবর্তী দিনের সময়সূচি সম্পর্কে কথা বলছেন। শিক্ষকের শেষ কথাগুলো এমন যে ‘ওকে, সবাই শোনো আজকের ক্লিনিং রোস্টার। প্রথম ও দ্বিতীয় সারি শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করবে। তৃতীয় ও চতুর্থ করিডোর, সিঁড়ি আর পঞ্চম সারিতে যারা আছো তারা টয়লেট পরিষ্কার করবে।’
পঞ্চম সারি থেকে কিছুটা কান্নার মতো শব্দ এলেও শিক্ষার্থীরা উঠে দাঁড়ায় এবং শ্রেণিকক্ষের পেছনে রাখা সব উপকরণ নিয়ে টয়লেটের দিকে ছুটতে থাকে। দেশটির সব স্কুলেই বছরের পর বছর ধরে এমন কর্মসূচি চলছেই।
জানা গেছে, দেশটিতে ১০ বছরের স্কুলজীবনে, এলিমেন্টারি থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত- শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের রুটিনে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিতে সময় দেওয়া থাকে। ঠিক বাড়িতে যেভাবে তাদের বাবা-মা খাওয়ার পর নিজেদের জিনিসপত্র ও বাড়ির আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখার কথা বলেন।
স্কুলের পাঠ্যক্রমে এ উপাদানটি অন্তর্ভুক্ত করার কারণে শিশুদের মধ্যে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করে। কে বা নোংরা করতে চায় যেটি তাদের নিজেদেরই পরিষ্কার করতে হয়।
এক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘আমি স্কুলের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নিতে চাইতাম না। কিন্তু পরে আমি মেনে নেই কারণ এটা আমাদের রুটিনের অংশ ছিল।’
স্কুলে পৌঁছে শিক্ষার্থীরা তাদের জুতা খুলে লকারে রেখে দেয়। যেই কাজটি তারা বাড়িতেও করে। শিশুরা স্বেচ্ছাসেবী হয়েও কমিউনিটি ক্লিনিংয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নেয়। এমনকি বাড়িতে কাজের লোক এলেও তাই করে থাকেন। শিশুরা যখন বড় হতে থাকে ধীরে ধীরে তারা শ্রেণিকক্ষ, নিজের বাড়ি কিংবা প্রতিবেশী, তারপর তাদের শহর ও দেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ধারণা পেতে থাকে।
দেশটির নাগরিকরা বলেন, তারা তাদের ভাবমূর্তির বিষয়ে খুব বেশি স্পর্শকাতর। তাদের সম্পর্কে কেউ খারাপ ধারণা পোষণ করবেন এটা তারা চান না।
দেশটিতে গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা অনেক বেড়ে যায়। খাদ্যদ্রব্য দ্রুত নষ্ট হয়ে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। সে কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৌদ্ধধর্মেও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব অনেক বেশি। বিশেষ করে রান্না আর পরিচ্ছন্নতা আধ্যাত্মিক বিষয় বলে বিবেচিত হয়। তবে বৌদ্ধধর্ম আসার আগে থেকেই জাপানিদের একটি নিজস্ব ধর্ম আছে, তা হলো শিনতো অর্থাৎ পরিচ্ছন্নতা।
সূত্র: বিবিসি