হাইকোর্টের এক রায় অমান্য করে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী মাছুম মিয়ার টাইমস্কেল মঞ্জুর করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের 'ম্যানেজ' করে টাইমস্কেলটি পেয়েছেন তিনি, এমন অভিযোগ উঠেছে বোর্ডের কর্মচারী সংঘের সাবেক এ সভাপতির বিরুদ্ধে। সোমবার (২৪ জুন) মাছুম মিয়াকে টাইমস্কেল দেওয়ার প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন বোর্ডের সাধারণ কর্মচারীরা। অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সেকশন অফিসার মো. মাছুম মিয়াকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে গনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে তাকে এ পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। সে প্রেক্ষিতে বোর্ড কর্মচারীরা উচ্চ আদালতে রিট করলে তার পদোন্নতির আদেশ স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে তিনি সেকশন অফিসার পদেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ জটিলতায় আটকে যায় মাছুম মিয়ার তৃতীয় টাইমস্কেল প্রাপ্তি।
তবে, হঠাৎ করেই গত বছর ২৫ নভেম্বর বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর ডিমোশন নিয়ে পূর্বের সেকশন অফিসার পদে ফিরে যাবার আবেদন করেন মাছুম মিয়া। ২৮ নভেম্বর শিক্ষা বোর্ড সচিব অধ্যাপক বিপ্লব কুমার ভট্রাচার্য স্বাক্ষরিত চিঠিতে মাছুম মিয়ার পদোন্নতি বাতিল করা হয়। তার পর দিনই মাছুম মিয়া তৃতীয় টাইমস্কেলের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ ডিসেম্বর মাছুম মিয়ার টাইমস্কেলের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে টাইমস্কেল প্রদান করার নির্দেশ দেয়া হয়। এর ফলে গত জানুয়ারি থেকে ১০ হাজার টাকা বেতন বেড়ে যায় মাছুম মিয়ার। এতদিন বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখা হয়।
তবে, সোমবার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বিক্ষোভ শুরু করেন কর্মচারীরা। তাদের দাবি, কর্মচারী সংঘ নেতারা মাছুম মিয়ার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করেছে। আর তাকে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে পদাবনতি নিয়ে টাইমস্কেল পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। এ আদেশ প্রত্যাহার না করলে কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণাও দিয়েছেন।
শিক্ষাবোর্ড কর্মচারী সংঘ সভাপতি আবু জাফর এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব মাছুম মিয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয় আমরা জানি না।
শিক্ষাবোর্ড সচিব অধ্যাপক বিপ্লব কুমার ভট্রাচার্য দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমি চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে আদেশে স্বাক্ষর করেছি। তিনি এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
তবে, বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ইউনুসের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার তাকে ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।
শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল মোতালেব হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ওই পদোন্নতি ও টাইমস্কেলের বিপরীতে উচ্চ আদালতে আমার সময়েই রিট করা হয়েছিলো। সিলেকশন (নিয়োগ ও পদোন্নতি) কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তার বিপরীতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে ফের সিলেকশন কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর আদালতে রিট চলমান থাকলে তা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচিন নয়।
শিক্ষাবোর্ডের আইনজীবি এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন এ বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, আমি জানি পদোন্নতি ও টাইমস্কেল নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট চলমান। এরপরও শিক্ষাবোর্ড কতৃপক্ষ কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানা নেই।
শিক্ষাবোর্ড সিলেকশন কমিটির সদস্য বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়ার রহমান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সিলেকশন কমিটি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা বাতিল করতে হলে ফের সিলেকশন কমিটির সভা করতে হয়। তবে শিক্ষাবোর্ড কতৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছেন তা না জেনে বলা যাবে না।