টাঙ্গাইলের বাসাইলে দাপনাজোর গ্রামের মার্থা লিন্ডস্ট্রম-নুরজাহান বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। চার বছর আগে বিদ্যালয়ের নিকটে গড়ে ওঠা ‘ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ প্রতিষ্ঠানটিই মূলত বিদ্যালয়টির ধ্বংসের কারণ বলে অভিযোগ শিক্ষক-কর্মচারী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর। তবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে এখন ছাত্রী সংখ্যা ১৫২। এক বছর আগেও ছিলো তিন শতাধিক। পাঁচ মাস আগে নতুন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের সভাপতিত্বে মাসিক জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই বিদ্যালয়ের সমস্যার বিষয়টি উঠে এলে বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান অলিদ ইসলাম দায়িত্ব নেন। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, আমি দেখছি বিষয়টি নিয়ে কি করা যায়।
সম্প্রতি দাপনাজোর গ্রামে যৌথ উদ্যোগ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগদানকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আব্দুর রহিম সুজন স্কুলটি প্রথমবারের মতো পরিদর্শন করেন।
অভিভাবক ও এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিনিয়ত আমাদের চোখের সামনে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ এমন কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছেন যে আমরা যেন আমাদের মেয়েদের এই বিদ্যালয় থেকে নিয়ে যাই। রিসোর্ট তৈরি করলেও কেন এর জন্য আলাদা করে কোনো যাতায়াতের গেট তৈরি করেনি কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের গেট দিয়েই ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্টে বেড়াতে আসা লোকজন যাতায়াত করেন।
একজন ছাত্রীর অভিভাবক জানান, রিসোর্টে আগতদের অশ্লীল চলাফেরা, আচরণ ও ব্যক্তিগত যানবাহন অবাধে চলাচল এবং পার্কিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মানছুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আমি মামলার সম্মুখীন হয়েছি।
শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিকিউরিটি শফিক বলেন, রিসোর্টের পাশেই আমার বাড়ি। সবসময় গানবাজনার সাউন্ড এতো বেশি যে আমার সাত মাসের বাচ্চার শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া ও মানসিক বিকাশের ঘাটতির আশঙ্কায় আছি।
একজন মুক্তিযোদ্ধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ করে বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় প্রকাশ্যে মদ বিক্রি হবে, এই জন্যই কি আমরা এই দেশ স্বাধীন করেছিলাম!’
উল্লেখ্য, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে দাপনাজোর গ্রামের স্থপতি আখতার হামিদ মাসুদ ও তার বিদেশি বন্ধু নরওয়ের নাগরিক কার্ল ফ্রেডরিক লিন্ডস্ট্রম তাদের দু’জনের মায়ের নামে এই বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামের মনোরম পরিবেশে বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনাম অর্জন করে। মানসম্মত শিক্ষাদান ও চমৎকার পরিবেশের কারণে দাপনাজোর এলাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছাত্রীরা ভর্তি হতে শুরু করেন। সেই সময় ৫০০ থেকে ৬০০ ছাত্রীর উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো ছিলো। একপর্যায়ে এমপিওভুক্ত হয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্যক্তি মালিকানায় ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর স্কুলের পাশে ও আশপাশের কৃষি জমি নিয়ে ওয়াটার গার্ডেন রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টার নামের একটি রিসোর্ট তৈরি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিসোর্টের মালিক ড. আহসান মনসুর বলেন, ‘প্রথমত গেটটা স্কুলের না, রাস্তাটাও স্কুলের না। আপনারা ভুল তথ্য নিয়ে এছেছেন । আপনারা আগে সঠিক তথ্য নিয়ে আসেন। স্কুলের মাঠ আছে, কিন্তু দেয়ালটা দেয়া হয়নি। সেটা আমরা দিয়ে দিতে পারি। স্কুল কমিটি যদি রিসোর্ট আর স্কুল সেপারেট করতে চায় তার সব ব্যবস্থা করা আছে। তাদের লক্ষ্য হলো, টু গ্যাপ, টু শেয়ার দ্য রিসোর্ট, সেজন্যই অপপ্রচার হচ্ছে।
রিসোর্টের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ফালতু কথা বলবেন না। মানুষ আনন্দ করতে আসে রিসোর্টে। আনন্দ করে চলে যায়। অপপ্রচার করবেন না। আপনাদের মতো সাংবাদিকরা পয়সা খেয়ে এই কাজ করেন। কোন এমন পত্রিকার আপনি? আসছে বিশ্ব পত্রিকা নিয়ে।’
এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেয়াল করা আছে, তাহলে আপনি কোন দেওয়ালের কথা বলছেন জানতে চেয়ে এসএমএস করলেও কোনো উত্তর মেলেনি।