ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের দাবি পূরণ করতে হবে। শুক্রবার (৫ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবুল বাশার হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। এসডিজি অর্জন করতে হলে শিক্ষা পরিবারের কোনো অংশকে বঞ্চিত বা অবহেলিত রাখা যাবে না।
ড. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রাপ্তির জন্য যৌক্তিকভাবে দাবি উপস্থাপন করতে হবে। শুধু ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বা বৈশাখী ভাতাই নয়, আরও অনেক কিছু রয়েছে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে। এটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকদের সব দাবি পূরণ হবে।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের মহাসচিব মো. জসিম উদ্দিন সিকদার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সংগঠনের অতিরিক্ত মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স, যুগ্ম সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফরহাদ কবির।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম অহিদুজ্জামান শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের আগেই শিক্ষকদের ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের মো. আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষানীতি-২০১০ একটি অসাধারণ শিক্ষা দর্শন। এই শিক্ষানীতি যদি বাস্তবায়ন ঘটে, তাহলে যে শিক্ষকরা বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন না এবং বৈশাখী ভাতা যারা পাচ্ছি না তাদের বৈষম্য দূর হবে। শিক্ষানীতির দর্শন বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষকদের অপ্রাপ্তি ও বৈষম্য দূর হবে। তবে তা এই সরকারের পক্ষেই বাস্তবায়ন সম্ভব। যে সরকার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে, সে সরকারই পারে আমাদের শিক্ষকদের ন্যূনতম চাহিদা দূর করতে।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়নের মহাসচিব মো. জসিম উদ্দিন সিকদার বলেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি হলো আমাদের জিডিপির শতকরা ৬ ভাগ এবং জাতীয় বাজেটের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি নেই। বাংলাদেশে শিক্ষাখাতে জিডিপির ২ শতাংশর চেয়ে একটু বেশি এবং জাতীয় বাজেটের মাত্র ১১ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। জাতির জনক ১৯৭৩-৭৪ খ্রিস্টাব্দে বলেছিলেন, শিক্ষখাতে জিডিপির কমপক্ষে ৪ ভাগ বরাদ্দ রাখতে হবে। এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর দর্শন। জাতির জনক ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে যে চিন্তা করেছেন, ইউনেস্কো সেটি করেছে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ এটি কোনো ব্যয় নয়, এটি একটি বিনিয়োগ। এ কথা প্রধানমন্ত্রীও বলে থাকেন।
১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো ও আইএলও’র যৌথ ঘোষণায় শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশসহ ১০০টির বেশি দেশ স্বাক্ষর করে এবং ওই বছর থেকে ৫ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়। বিশেষ করে শিক্ষক সংগঠনগুলো এই দিবসটি পালন করে থাকে। ঘোষণায় শিক্ষকদের মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাই শিক্ষক এবং শিক্ষকরা হবেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। শিক্ষকরা হবেন সবচেয়ে যোগ্য এবং তাদের মেধা ও ত্যাগের মাধ্যমে জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। শিক্ষকসমাজ একটি দেশের এমন একটি সম্পদ, তাদের পেছনে সর্বোচ্চ ব্যয় করতে হবে এবং এ ব্যয় হবে বিনিয়োগ যা স্থায়ী সম্পদে পরিণত হবে। তাই বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনকালে জাতিকে মনে করিয়ে দেয় শিক্ষকের মর্যাদার কথা।