শিক্ষক দম্পতির তিন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত

মোনায়েম খান, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি |

একই ইউনিয়নে এক দম্পতির তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। একই দম্পতি প্রতিষ্ঠিত এ তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ায় চারিদিকে হইচই পড়ে গেছে। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এ তথ্য জাানা গেছে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের এ ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এমপিওবঞ্চিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা। 

প্রতিষ্ঠান তিনটি হল, দেউলমুড়া এন আর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, দেউলমুড়া  জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয় ও দেউলমুড়া জিআর বালিকা বিদ্যালয় (সেক্রেটারিয়েল সায়েন্স)। এর মধ্যে স্বামীর একটি প্রতিষ্ঠান ও স্ত্রীর দুটি প্রতিষ্ঠান। এ তথ্য তিনটি প্রতিষ্ঠানই গোপন করে এমপিওর আবেদন করেছে। স্বামীর  প্রতিষ্ঠানের একটি নির্মানাধীন ভবন থাকলেও সরেজমিন সেখানে কোনো শিক্ষার্থী পাওয়া যায়নি। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীকেও পাওয়া যায়নি। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী দেখিয়ে এমপিওভুক্তির অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। 

এক ফ্রেমে শিক্ষক দম্পতির তিনটি প্রতিষ্ঠান

জানা যায়, বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের মিরের দেউলমুড়াতে মিরের দেউলমুড়া জিআর মডেল বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান প্রতিষ্ঠাতা রুবা খাতুন। এই প্রতিষ্ঠানের নামেই খোলা হয় কারিগরি শাখা। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেন তার স্বামী হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম নান্নু। শিক্ষক নান্নু চাকরির নিয়ম ভঙ্গ করে তিনি তার ও তার স্ত্রীর নামে নান্নু রুবা অর্থাৎ দেউলমুড়া এনআর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নেন রফিকুল ইসলাম নান্নু নিজেই। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বিধিভঙ্গ করে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি।  

সরেজমিনে একটি প্রতিষ্ঠানে আঙিনায় দাড়িয়ে পাশাপাশি স্থাপিত অপর দুইটি প্রতিষ্ঠান সহজেই দেখা যায়। কাছাকাছি তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন অনেক ননএমপিও শিক্ষক। একশগজের মধ্যে স্থাপিত তিনটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় কিভাবে স্থান পেল তা নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই এলাকাবাসীর। প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র একটি ভবন নির্মান হচ্ছে। ল্যাবসহ কম্পিউটারের সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও এমপিও হয়েছে। কাগজে কলমে স্থান ও ছাত্র-ছাত্রীর নাম ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। এখানে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এনে পরীক্ষা দেয়া হয় এমন অভিযোগ আছে অসংখ্য।

অভিযোগ রয়েছে, এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের কাগজপত্রে চরম জালিয়াতি রয়েছে। যে কারনে এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষক কর্মচারীকে নিয়োগ ও যোগদানপত্র দেয়া হয়নি। এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসায় আগের কর্মচারীদের নাম বাদ দিয়ে নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্যে নেমেছে স্বামী স্ত্রী। শিক্ষক কর্মচারীরা এনিয়ে চরম আতংকে রয়েছে। 

হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, রফিকুল ইসলাম নান্নু মিয়া তার প্রতিষ্ঠানে গত ১৫বছর যাবৎ সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং গত আগস্ট মাসেও তিনি বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। তার নিজের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ায় খুব তাড়াতাডি চাকরি থেকে ইস্থফা পত্র জমা দেয়ার কথা রয়েছে। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রফিকুল ইসলাম নান্নু দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে স্বীকার করেন তিনি হাতেম হাসিল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তবে, একটি প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত হয়ে অপর দুইটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি। প্রশ্নটি একাধিকবার করা হলেও তিনি এ প্রশ্নের কোনো উত্তরদিতে পারেননি। পরে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী যাচ্ছি এখন কথা বলতে পারবো না।’ 

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল্লাহ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তালিকায় স্থান পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় তথ্য যাচাই বাছাই চলছে। যাচাই বাছাইয়ের পরেই চুড়ান্ত এমপিও পাবেন বলে জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীমুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসলেই যে প্রতিষ্ঠান বেতনভুক্ত হবে এমনটির কোন নিশ্চয়তা নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ উঠেছে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো যাচাই বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশনা এসেছে। তিনি আরও বলেন,অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035300254821777