শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার ক্ষতি পোষাতে দরকার ১০০ কোটি টাকা

নূর মোহাম্মদ  |

চলতি বছর দেশের ২৮টি জেলায় দু’দফা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এই বন্যায় অবকাঠামো খাতের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পরবর্তীতে এসব মেরামত করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত করতে চাওয়া হয়েছে ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর প্রাথমিকে ৪৫ কোটি টাকা চাওয়া হলেও সর্বশেষ ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।শিগগিরই এই টাকা ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এবার দু’দফায় বন্যায় প্রাথমিকে বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ২৯৬৯টি। এসব প্রতিষ্ঠান মেরামত করতে জেলা থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পর্যালোচনা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অগ্রাধিকার জেলার মধ্যে আছে- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, সিলেট ও জামালপুর জেলা। বাকি জেলাগুলোকে পরবর্তীতে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, জেলাওয়ারী চাহিদার প্রেক্ষিতে ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই টাকা পাঠানো হচ্ছে। তিনি জানান, উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা দেয়া হয়েছে। জরুরি বরাদ্দের জন্য আরো টাকা চাওয়া হয়েছে। সেটি পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আরো প্রতিষ্ঠান মেরামত করা যাবে।

আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরামতের দায়িত্বে থাকা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। সেই দপ্তরের তথ্যমতে, বন্যার ক্ষয়ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি জেলার ১ হাজার ৫৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মেরামত করতে ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার টাকা প্রয়োজন। এই টাকা সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে। এখনো বরাদ্দ মেলেনি। এই টাকা পাওয়া গেলে বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত সব প্রতিষ্ঠানের মেরামত করা সম্ভব হবে। বিভাগওয়ারী ক্ষতির পরিমাণে এগিয়ে আছে রংপুর বিভাগ, এই বিভাগের ৭৪০টি প্রতিষ্ঠান মেরামত করতে প্রয়োজন ১৯ কোটি ৭৪ লাখ, এরপর ঢাকা বিভাগের ৪৪৩টি প্রতিষ্ঠান মেরামত করতে প্রয়োজন ১৫ কোটি ৫৭ লাখ, সিলেট বিভাগে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান মেরামতে প্রয়োজন ১২ কোটি ৯৫ লাখ, রাজশাহীর ২১২টি প্রতিষ্ঠানে ৬ কোটি ১০ লাখ, চট্টগ্রামে ৯১ লাখ, খুলনা বিভাগের প্রয়োজন ২৬ লাখ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত ২৮টি জেলার মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হয়েছে দিনাজপুরে, এই জেলার ২৮৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষয়ক্ষতির মেরামত করতে লাগবে ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এরপর সুনামগঞ্জের ৬১টি প্রতিষ্ঠানের মেরামত করতে লাগবে ৭ কোটি ৬৬ লাখ, মৌলভীবাজারে ৫৮টি প্রতিষ্ঠানে মেরামতে লাগবে ১ কোটি ১৭ লাখ, কুড়িগ্রামে ২২০টি প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৫১ লাখ, সিলেটে ৪ কোটি ১১ লাখ, শরীয়তপুর ১ কোটি ২৫ লাখ, মানিকগঞ্জে ৪ কোটি ৬৫ লাখ, টাঙ্গাইল ১ কোটি ৬২ লাখ, সিরাজগঞ্জে ৩ কোটি ২০ লাখ, নওগাঁ ১ কোটি ৯১ লাখ, জামালপুর ২ কোটি ৫৬ লাখ, নেত্রকোনা ১ কোটি ২২ লাখ, কিশোরগঞ্জে ১ কোটি ৪৯ লাখ, নাটোরে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও তালিকায় আছে ময়মনসিংহ ১ কোটি ৫ লাখ, পাবনা ১ কোটি ৬২ লাখ, লালমনিরহাটে ১ কোটি ৪৮ লাখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩০ লাখ, মাদারীপুর ৭৬ লাখ, রাজবাড়ী ৫৩ লাখ, কুষ্টিয়া ২৬ লাখ, রংপুর ৪০ লাখ, গাইবান্ধা ৯০ লাখ, পঞ্চগড় ৫ লাখ, জয়পুরহাট ২৯ লাখ এবং বগুড়ায় ২৩ লাখ টাকা মেরামত বাবদ চাওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালা  বলেন, বন্যার পরপরই ছোট ছোট অনেক মেরামত আমরা নিয়মিতভাবে করে দিয়েছি। এটা প্রত্যেক জোন ও জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর করে দিয়েছে। চাহিদার টাকা পাওয়া গেলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি মেরামত করা যাবে। আশা করি খুব শিগগিরই এ টাকা পেয়ে যাব।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দফা বন্যায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক ও ভৌত অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। অন্তত ২৩ জেলার শিক্ষায় এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রভাব পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় বলে জানান কর্মকর্তারা। বন্যায় সাধারণত চর ও গ্রাম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব এলাকায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি হওয়ায় জুন-জুলাইয়ে প্রথম দফা এবং আগস্টে দ্বিতীয় দফা বন্যায় একাডেমিক ক্ষতির প্রভাব পড়ে। এবার চলতি বছর প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় এর প্রভাব পড়বে এমন শঙ্কার কথা জানান কর্মকর্তারা। কারণ টানা তিন মাস কোনো না কোনোভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ ছিল। একই কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়িতেও পড়াশোনা করতে পারেনি। বন্যাকবলিত গ্রাম ও শহরের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফলের ব্যবধান আরো বেড়ে যেতে পারে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামতের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক প্রতিনিধিরা শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের বিষয়টি মনিটর করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২৩টি জেলায় ২ হাজার ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। কোনোটি আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সূত্র: মানবজমিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049161911010742