শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, যদি কোনো শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়, তাহলে তার দায় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের নিতে হবে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত ‘মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, শুধু ভাল শিক্ষা দিলেই হবে না। শিক্ষার্থীরা কোথায় গেল, কী করল, তার খোঁজখবর রাখতে হবে এবং তাদেরকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, একজন মাদকাসক্ত মানুষের জীবন মৃত্যুর চেয়েও অনেক কষ্টের। মানুষ মরার সময়ও এত কষ্ট পায় না, যে কষ্ট একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি তাঁর জীবনে পেয়ে থাকেন।সামাজিক সচেতনতাই মাদক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পরে। এ জন্য সবার সহযোগিতায় সামাজিক আন্দোলন ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একে অন্যকে দোষারোপ না করে সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে হবে।
মাদকাসক্ত হওয়া শুধু ব্যক্তির দোষ নয় মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই খেলার মাঠ নেই, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয় না, বিনোদনের মাধ্যম নেই। এ ধরনের অনেক কারণে শিক্ষার্থীরা মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
শিক্ষামন্ত্রী সভায় উপস্থিত শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নিজ নিজ এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করার আহ্বান জানান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা মাদকের দিকে ধাবিত হলে তার জবাবদিহি আপনাদের করতে হবে।সন্তানদের সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সন্তান কোথায় যায়, কী করে, কার সঙ্গে মেশে—সেই খোঁজখবর রাখুন। কুসঙ্গ হলে পরিত্যাগ করার পরামর্শ দেন। সন্তানের সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে সন্তান মাদক সেবনে আগ্রহী হয়।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মানুষ মনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, দুঃখ-কষ্ট ভুলে থাকতে নাকি মাদক সেবন করে। কিন্তু আমি দেখেছি মাদকাসক্তরা কেমন কষ্ট পায়। মাদক না পেলে তাদের খিঁচুনি ওঠে, শারীরিক যন্ত্রণা হয়, নিজের মাথার চুল ছিঁড়ে, পাগল হয়ে যায়।
আলোচনায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, নিজেরা সচেতন হও, বন্ধুদের সচেতন করো, তোমরা এবং তোমাদের বন্ধুরা যেন কেউ মাদকাসক্ত না হও।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এস এ মাহাবুব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন প্রমুখ।