সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মণিরামপুরে শিক্ষকদের রমরমা কোচিং বাণিজ্য

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি |

শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিলেও যশোরের মণিরামপুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, স্বাস্থ্য বিধির তোয়াক্কা না করে এসব শিক্ষকরা দলবদ্ধভাবে বাসায় অথবা কোচিং সেন্টারে সকাল-সন্ধ্যা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের কোচিং ব্যবসা। এদিকে শিক্ষকদের অবাধ কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত থাকলেও অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থাকার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, কেবল মণিরামপুর পৌর অঞ্চলে কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক। তারা পৌর এলাকার মণিরামপুর, তাহেরপুর, হাকোবা, মহোনপুরে নিজ বাড়ি ও ভাড়া বাড়িতে এ কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন। এদের মধ্যে ইংরেজি বিষয়ের কোচিং চালু রেখেছেন মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল ইমরান, মনোহরপুর দাখিল মাদরাসার শিক্ষক ইনামুল হক, ভরতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দীন, সুবোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহেন মন্ডল, ইনামুল হোসেন, সরকারি কলেজের শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান।

অপরদিকে, গণিতের কোচিং চালু রেখেছেন মহিলা কলেজের শিক্ষক আ. সবুর, ফজলুর রহমান, সরকারি কলেজের মশিয়ার রহমান, রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিদ্যুৎ সরকার, মণিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাদিউজ্জামান, মণিরামপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিনুর রহমান, পরিমল সরকার, নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আমিনুর রহমান, কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হায়দার আলী।

পদার্থবিজ্ঞান পড়াচ্ছেন নেংগুড়াহাট ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক মকলেছুর রহমান, মণিরামপুর আলিমা মাদরাসার শিক্ষক সঞ্জয় সরকার। জীববিজ্ঞান পড়াচ্ছেন তালা সুভাশিনী কলেজের শিক্ষক গৌতম রায়, মুক্তেশ্বরী কলেজের শিক্ষক বিজন সরকার। রসায়নের কোচিং অব্যাহত রেখেছেন ঢাকুরিয়া কলেজের শিক্ষক শাহিন আলম, মণিরামপুর মহিলা কলেজের শিক্ষক নমিতা মন্ডল, বালিয়াডাঙ্গা খানপুর কলেজের শিক্ষক মো. আব্দুল্লাহ। আইসিটিতে কোচিং করাচ্ছেন শিক্ষক আব্দুল্লাহ ফারুক। বাংলায় সরকারি কলেজের শিক্ষক আহাদ আলী, হাফিজুর রহমান ও হিসাববিজ্ঞান পড়াচ্ছেন মহিবুল্লাহ, অশোক চন্দ্র এবং গোলাম নবী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে যেখানে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন, সেখানে শিক্ষকরাই কীভাবে দলবদ্ধভাবে এমন কোচিং বাণিজ্য করে যাচ্ছেন?

অনৈতিক এ কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন অভিভাবকদের কোটি কোটি টাকা। জানা যায়, গণিতে আব্দুস সবুর ও মশিয়ার রহমান, পদার্থে সঞ্জয় ও মকলেচুর, রসায়নে শাহিন ও নমিতা এবং ইংরেজিতে মোস্তাফিজুর রহমান, মাহমুদুল ইমরান এবং আইসিটিতে আব্দুল্লাহ ফারুকের কোচিং সেন্টার বেশ রমরমা।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মণিরামপুর আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক সঞ্জয় সরকার কোচিং করিয়ে প্রতিমাসে আড়ায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। কোচিংয়ের আয়ে মোহনপুর মৌজায় সম্প্রতি ৫২ লাখ টাকা দিয়ে জমি কিনেছেন তিনি। এছাড়া কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে বর্তমানে তিনি প্রায় ২ কোটি টাকার মালিক বলে প্রচার রয়েছে এলাকায়।

এদিকে কোচিং বাণিজ্য থেকে মাসে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা রোজগার করছেন ঢাকুরিয়া কলেজের রসায়নের শিক্ষক শাহিন আলম। হাকোবা গ্রামে ভাড়াতে থাকলেও রীতিমত যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সেখানে।

গণিতের শিক্ষক আব্দুস সবুর এবং মশিয়ার রহমানের কোচিং বাণিজ্য থেকে মাসে আসছে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কোচিং শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অভিভাবকদের চাপে পড়াতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন থেকে কোনো চাপ আসছে কি না এমন প্রশ্নে জানান, একটু-আধটু চাপতো থাকবেই। তারপরও ম্যানেজ করে চললে কোনো অসুবিধা নেই।

অভিভাবকরা কেউ কেউ দাবি করেছেন, প্রাইভেট পড়ালেও এ মুহূর্তে পড়াচ্ছি না। তবে ভিন্ন মত মিলেছে একজন অভিভাবক ও শিক্ষকের কাছ থেকে।

দূর্গাপুর গ্রামের অভিভাবক শফিয়ার রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শুধু করোনা বা সংক্রমণ এড়াতে প্রাইভেট পড়াতে পারছি না ছেলেকে।

মণিরামপুর আদর্শ সম্মেলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, একমাত্র অজ্ঞ শিক্ষক এবং অভিভাবকরাই কেবল দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট মাস্টারদের কাছে পাঠাচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, যারা কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন তাদের একটি তালিকা রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের হাতে। তবে এ তালিকা হাতে থাকলেও গত ২/৩ মাসেও কোনো কার্যকর পদপেক্ষ দৃশ্যমান নয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ মুহূর্তে প্রাইভেট পড়াচ্ছে এমন সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উল্লাহ শরীফির মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ করেননি তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005612850189209