সরকারি স্কুলে শতভাগ পাস, শিক্ষার্থী ৫!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি |

বিদ্যালয়ের অবস্থান উপজেলা সদরে। উপজেলা সদরের একমাত্র বালিকা বিদ্যালয়। আবার উপজেলার ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এটিই একমাত্র সরকারি। প্রতিষ্ঠার দিক থেকেও বেশ পুরোনো ৫০ বছর বয়স। সরকারি হয়েছে ৩৩ বছর আগে। এ বছরের এসএসসি'র ফলাফলে বিদ্যালয় থেকে পাসের হার শতভাগ। তবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫ জন। এরমধ্যে আবার একজন আগের পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলার একমাত্র সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বেহাল দশার কথা। বিদ্যালয়টিতে একটি চারতলা ও একটি তিনতলা ভবন থাকলেও শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ২৯৩ জন। মাত্র ৫জন শিক্ষক থাকা ওই বিদ্যালয়টিতে একজন খন্ডকালীন শিক্ষক রাখা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পদটিও দীর্ঘ দিন ধরে খালি রয়েছে। তবে আশার বিষয় হচ্ছে চলতি বছর থেকে বিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়েছে।

গত কয়েক বছরের শিক্ষার্থী হার থেকে জানা যায়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও পরবর্তীতে এর হার কমতে থাকে। বিশেষ করে জেএসসি পরীক্ষার পর নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর হার খুবই কমে যায়। এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬০ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৮১ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ৮৯ জন, নবম শ্রেণিতে ৪৩ জন ও দশম শ্রেণিতে ২০ জন রয়েছে। অর্থাৎ আগামী বছর মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে।

চলতি বছরের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে ১৪টি বিদ্যালয় শতভাগ পাশের কৃতিত্ব দেখিয়েছে এর মধ্যে নাসিরনগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় একটি। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিলো মাত্র ৫ জন। অবশ্য এর মধ্যে কেউ জিপিএ-৫ পায় নি।

উপজেলার উল্লেখযোগ্য বিদ্যালয়ের মধ্যে নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০৬ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৮২ জন, ফান্দাউক পন্ডিতরাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৩৪ জন পরীক্ষা দিয়ে ৮৯ জন, চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৮০ জন পরীক্ষা দিয়ে ১২২ জন, গোকর্ণ সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১১৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ৯০ জন পাস করে। উপজেলার একমাত্র বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয় নুরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ১০ জন পাস করে। এর বাইরে সবচেয়ে কম পরীক্ষা দেয়া শ্রীঘর এসইএলডিপি মডেল স্কুল থেকে ২২ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৬ জন পাস করে। উপজেলার ১৮টি স্কুল  থেকে ১২৪৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ৯৩৫ জন পাস করে। পাসের হার ৭৪.৬ শতাংশ।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর মিয়া বলেন, বিভিন্ন কারণেই বিদ্যালয়ে এস.এস.সি পরীক্ষার্থী কম হয়। বিশেষ করে জেএসসি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেএসসিতে ফেল করলে নবম শ্রেণিতে উঠার সুযোগ থাকে না বলে অনেকেই ছিটেক পড়েন। এ ছাড়া অনেকের বিয়েও হয়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করি সীমিত সাধ্যের মধ্যে সবটুকু দেওয়ার।

স্থানীয় অভিভাবকদের ধারনা, এ বিদ্যালয় থেকে পড়ে নাকি ভালো কোনো চাকরি পাওয়া যায় না কিংবা এ বিদ্যালয়ে পড়লে নাকি মূল্যায়ন কম। এক অভিভাবক সমাবেশে উপস্থিত স্থানীয় সংসদ সদস্য এসব কথা শুনে থমকে গেলেন, সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরাও।

ইউএনও নাজমা আশরাফী বলেন, সরকারি ওই স্কুলটিতে একাধিক কারণে শিক্ষার্থী কম বলে আমার কাছে মনে হয়। আমি যোগদানের পর চেষ্টা করেছি ওই স্কুলটির প্রচারণার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করার। অভিভাবক সমাবেশে অভিভাবকদের কথা শুনে এম.পি মহোদয়সহ আমরা অবাক হই।  


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023510456085205