সর্বাত্মক শিক্ষক আন্দোলনের বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন দাবি আদায়ে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের কারণে সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও ভর্তির মৌসুম চলছে। নতুন বছরের মুরুতে বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হবে। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকেরা আন্দোলনে নামায় এসব বাধাগ্রস্ত হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।

বর্তমানে পাঁচ ধরণের শিক্ষকরা পৃথক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। এমপিওভুক্তির দাবিতে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এবং আলাদা বেতন স্কেলের দাবিতে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সমিতির শিক্ষকরা, আবার জাতীয়করণের দাবীতে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। আবার  ক্যাডার নন-ক্যাডারের আ্ড়ালে সরকারের কলেজ জাতীয়করণের বিরোধীতা করে করছেন সরকারি কলেজ শিক্ষকরা, বেতনে বৈষম্য কমাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই আন্দোলন নিয়ে সরকারও অস্বস্তিতে রয়েছে।

অতীতেও দেখা গেছে, সরকারের শেষ সময়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো মাঠে নেমে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে। ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৬ সালে নির্বাচনের আগেভাগে দাবি আদায়ের  নজির রয়েছে। ভোটের রাজনীতির কারণে ওই সময়ে সরকার নমনীয় হযেছিল।

প্রাথমিক মাধ্যমিক ও কলেজ এই তিনন স্তরে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে অনেকে আন্দোলন করছেন। আবার অনেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তি চান। ৪ লাখ এমপিওভুক্তি শিক্ষক চান জাতীয়করণ। প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দাবি রয়েছে বেতনবৈষম্য কমানো। প্রধান শিক্ষকরা চান পদমর্যাদার সঙ্গে গ্রেড বৃদ্ধি। এছাড়াও রয়েছে জাতীয়করণকৃতদের ননক্যাডারে রাখতে আন্দোলন।

এর মধ্যে নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও ইবতেদায়ি শিক্ষকরা মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তায় বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। বেতন বৈষম্যের দাবিতে গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকরা শহীদ মিনারে অনশন ভঙ্গ করলেও তারা ক্ষোভ নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকদের দাবি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, শিগগিরই সহকারি শিক্ষকদের সমস্যা বিষয়ে কাজ শুরু করা হবে। এমন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেও শিক্ষকরা আন্দোলন থামাচ্ছেন না। বরং মন্ত্রী ও সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষকরা নানা মন্তব্য করে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তিন দিন অনশনের পর কর্মসূচি স্থগিত করা শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে শিগগিরই আলোচনায় বসবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই আলোচনায় শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক মনে হলে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের অনশন স্থগিত না হতেই এবার এমপিওভুক্তির  রাজপথে নেমেছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।  মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আগামী সোমবার (১ জানুয়ারি) তারা আমরণ অনশন শুরু করবেন। তাদের দাবি, দীর্ঘ ১০ থেকে ১৫ বছর বিনা বেতনে শিক্ষাদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন তারা। এ কারণে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। তাই শিক্ষার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না। এমপিওভুক্তির ঘোষণা না আসা পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, দেশের ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও কারিগরি মাদ্রাসা। সবই বেসরকারি ব্যবস্থাপনানির্ভর। এর মধ্যে বিভিন্ন স্তরে পাঁচ-ছয় হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে, যা এই স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক-চতুর্থাংশ। অন্য একাধিক শিক্ষক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীকে পাঠদানের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে তারা বিনা বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্পন্ন শিক্ষাদান কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা না হলে সেগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পাশেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকরাও তাদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন।

মাদ্রাসা জাতীয়করণসহ ছয় দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি ফাউন্ডেশন।  মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা। নতুন বছরের শুরুর দিন ১ জানয়ারি সোমবার থেকে তারা ফের অবস্থান ধর্মঢ়ট শুরু করবে।। সংগঠনের নেতারা বলেন, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায় বেতন স্কেল, সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ এবং শিক্ষকদের জন্য সিইনএড প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ সময় ইবতেদায়ি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে জাতীয়করণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ন্যায় বেতন স্কেল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির আদেশ অনুযায়ী শিক্ষকদের উপবৃত্তি প্রদান, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য পৃথক ভবন নির্মাণ, প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায় প্রশিক্ষণ এবং উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে দরখাস্ত করার সুযোগ।

অপরদিকে, দেশের প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণ হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশে জাতীয়করণ হওয়া কলেজের শিক্ষকদের আত্মীকরণ করলে তাদের মর্যাদা যাতে কোনোভাবেই বিসিএস ক্যাডার দেয়া না হয় সে জন্য সরকারি কলেজের শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন। এর মধ্যেই তারা কলেজ বন্ধ করে কর্মবিরতি করেন। জানুয়ারিতে একটানা তিন দিন এ ধরনের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা আছে বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকদের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00335693359375