হেফাজত নেতাদের কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের চলমান রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই দীর্ঘ সাড়ে ৮ বছর পর গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন করল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মহান বিজয় দিবসের পরদিন এ ধরনের আয়োজন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সম্মেলন করেছে সংগঠনটি। ওই সম্মেলনে মূলত হেফাজত তাদের ১৩ দফা দাবি আদায়ে গুরুত্ব আরোপ করেছে। সেই সঙ্গে আরও নতুনভাবে ৭ দফা দাবি ও তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করে। এদিকে, এই ৭ দফা আদায়ের লক্ষ্যে এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ বেশকিছু ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বৈঠক করেছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে কারাগারে আটক নেতাদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষা কমিশনে আলেমদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জোর দাবি জানানো হয়। বৈঠকের পর নেতাকর্মীরা তাদের দাবি আদায়ে আশাবাদী। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শফিকুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের ওই বৈঠকে ‘রাজনীতি ও নির্বাচন’ নিয়ে একটি শব্দও আলোচনা হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী হেফাজত নেতাদের বলেছেন, ‘আপনারা ধর্মকর্ম করুন। রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করবেন না। ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা রাখাই ভালো।’

গত শনিবার ঢাকায় সম্মেলন শেষে হেফাজতের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেও সেখানে ছিলেন না সংগঠনের আমির মাওলানা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি বৈঠকে কেন যাননি, এ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। অবশ্য হেফাজতের নেতারা বলছেন, আমির যাওয়া বা না যাওয়ার চেয়ে বড় হলো আমিরের পক্ষে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া। যেহেতু আমির বয়স্ক মানুষ। তা ছাড়া গত অক্টোবরে হেফাজতের শীর্ষ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমির যাবেন—এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর হেফাজত নেতারা ফুরফুরে। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন।

গত ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমিরে হেফাজতের একটি চিঠি দেওয়া হবে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় চাচ্ছিল হেফাজত। কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি। এরই মধ্যে ১৭ ডিসেম্বর সংগঠনের পূর্বনির্ধারিত ‘ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন’ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় জড়ো হন। সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নেতারা। আগের দিন বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট সবার করোনা টেস্টসহ নানা প্রক্রিয়াও দ্রুত সম্পন্ন হয়। তবে এ নিয়ে হেফাজতের কোনো নেতাকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল।

ঢাকায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের পরই সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইয়াহিয়া ও মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গণভবনে যায়। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, সালাউদ্দিন নানুপুরী, মুফতি জসিম উদ্দিন, মহিবুল হক গাছবাড়ি, আব্দুল কাইউম সোবহানী, মীর ইদ্রিস, কেফায়েতুল্লাহ আজহারী প্রমুখ। জানা যায়, নেতাকর্মীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের আলোচনা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিকেল ৪টার আগেই হেফাজতের নেতারা পৌঁছে যান গণভবনে। সেখানে তারা আসর ও মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। আসরের নামাজের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা। মাগরিবের নামাজ শেষে হেফাজত নেতাদের জন্য গণভবনে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন—এমন এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়ন তো প্রধানমন্ত্রীর মতোই হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি একবার আমার এক বিশেষ মেহমানের জন্য ২১ পদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলাম। আর তিনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং তার আপ্যায়নে পদের বিষয়টি নিজেরাই বুঝে নেন। সেখানে আকর্ষণীয় পদের কোনো ঘাটতি ছিল না—এমনটা বলতে পারি। সব পদ ছুঁয়ে দেখাও সবার সম্ভব হয়নি।’

হেফাজতের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বৈঠকে না থাকা প্রসঙ্গে হেফাজত নেতারা বলেন, বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল সংগঠনের আমিরের দুই পৃষ্ঠার বিশেষ চিঠিটি পৌঁছানো। সুতরাং তিনি সরাসরি বৈঠকে গেলে তো আর চিঠির বিষয়টি গুরুত্ব পায় না। এ ছাড়া তিনি দিনভর সম্মেলন নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলেন। বয়স্ক মানুষ বিকেলে একটু ক্লান্তও ছিলেন। তাই বৈঠকে তার যাওয়া সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী গতকাল বুধবার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। তার আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। আমাদের দাবি-দাওয়া পূরণের বিষয়টি তিনি মন থেকে উপলব্ধি করেছেন। নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছিলাম। এক নম্বরে বলেছিলাম সংগঠনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর মুক্তির বিষয়টি। বৈঠকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার কারামুক্তিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই বৈঠকের সুফল। আশা করি, অন্য দাবিগুলো পূরণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের যথাসময়ে কার্যকর ও বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, সম্মেলন শেষে আমরা ১১ জনের প্রতিনিধি দল বিকেল ৩টার দিকে গণভবনে যাই। পৌঁছেই নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে হালকা নাশতা-পানির ব্যবস্থা ছিল। আসরের নামাজের পর শুরু হওয়া বৈঠক চলে মাগরিবের আগমুহূর্ত পর্যন্ত। নামাজ শেষে আবারও আপ্যায়নের বাহারি নাশতার ব্যবস্থা ছিল। তবে নাশতার টেবিলে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি রশীদ মামুন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পরদিনই হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী কারামুক্ত হন। এটিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘বৈঠকের সুফল’ হিসেবে মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। তারা বলছেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি পূরণের যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তা ‘বাস্তবায়ন’ শুরু হয়েছে। মাওলানা মীর ইদ্রিস বলেন, আটক নেতাদের একজন এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। অন্যদের মুক্তির অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস যথাসময়ে পূরণ হবে বলে এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026860237121582