‘আপনারা, মন্ত্রীরা বড় বড় কথা বলায় উপাচার্যদের যে অবস্থা হয়, এটা কল্পনা করতে পারবেন না’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফি থেকে শিক্ষক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের প্রচুর পরিমাণে টাকা নেওয়ার সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চলতি দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। একই সঙ্গে উপাচার্যদের কাছ থেকে গবেষণা প্রকল্পের প্রস্তাব আসে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। আর তাতেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি ভবনে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ইউজিসির সঙ্গে উপাচার্যদের এক সভায় এমন ঘটনা ঘটে। ওই সভায় প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এবার দেশের ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিনটি গুচ্ছে হবে এই পরীক্ষা। এর মধ্যে নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবার প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি-ইচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়ে তাঁর যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা (একাধিক গুচ্ছ) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন।

বৈঠকের শেষ পর্যায়ে বক্তব্য দেন ইউজিসির চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম। ভর্তি পরীক্ষার ফি থেকে শিক্ষক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের প্রচুর পরিমাণে টাকা নেওয়ার প্রবণতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমার জীবনে আমি মাত্র তিন হাজার টাকা পেয়েছি, তাহলে কি না খেয়ে আছি? আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণা করেন, প্রকল্প প্রস্তাব দেন, সেখান থেকেও তো প্রচুর টাকা পাবেন।’ এ সময় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা গ্রহণের তদন্ত করার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।

উপাচার্যদের কাছ থেকে গবেষণা প্রকল্পের প্রস্তাব আসে না বলে আক্ষেপ করেন দিল আফরোজা বেগম। তাঁর বক্তব্য চলার সময়ই ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তাঁর প্রকল্পের প্রস্তাবের টাকা আটকে আছে। ফাইলটি তিন মাস ধরে মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। কারণ তাঁর কাছে কোনো একটা চাকরি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দিতে পারেননি। কারণ, ওই প্রার্থী ৫০–এর মধ্যে মাত্র ১০ পেয়েছে। এ বিষয়টি তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে জানাবেন। 

দিল আফরোজা বেগমের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ‘এভাবে আপনারা অনেক কথা বলেন, কয়টা টাকা দিয়েছেন বলেন? আপনারা, মন্ত্রীরা সব জায়গায় বড় বড় কথা বলে ফেলেন এবং আমাদের শিক্ষকেরা সেটা শুনে ফেলেন, তার ফলে উপাচার্যদের যে অবস্থা হয়, আপনারা এটা কল্পনা করতে পারবেন না।’

বৈঠকে ইউজিসির তিনজন সদস্য, সচিব এবং ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তাঁদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিদ্যমান সংকট সমাধানে ভর্তি পরীক্ষার স্কোর এবং শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রম থেকে কেন্দ্রীয়ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরিবর্তনে (মাইগ্রেশন) সময় নির্ধারণ করে দিয়ে ভর্তির কাজ শেষ করা এবং একজন শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, কেবল ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির টাকা দেওয়ার (ভর্তি ফি একবারই দেওয়া) সুপারিশ করেছে ইউজিসি। এ ছাড়া ইউজিসির পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার ফি যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা ও শিক্ষার্থী ভর্তি কম হয়, এমন বিভাগগুলোর আসনসংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আর গুচ্ছের বাইরে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি ও ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে সারা দেশে ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। একসময় ভর্তি পরীক্ষা দিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দৌড়াতে হতো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হয়। এর মাধ্যমে দুর্ভোগ অনেকটা কমলেও এখনো বেশ কিছু সংকট রয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর প্রথমবারের মতো গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিলেও পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বারবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন পূরণ করতে পারছে না।

এ অবস্থায় আজকের সভায় ইউজিসি এবং উপাচার্যদের পক্ষ থেকে এসব সংকট সমাধানের ওপর আলোচনা ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। ওই বৈঠকের পরপরই গুচ্ছে থাকা সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা নিজেদের মধ্যে সভা করেন।

ওই বৈঠকে উপস্থিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, তাঁদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বারও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। 

অর্থাৎ গতবার পরীক্ষা দিয়েও যাঁরা ভর্তির সুযোগ পাননি, তাঁরা চাইলে এবারও অংশ নিতে পারবেন। গতবার যেখানে নির্ধারিতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, এবার আবেদনকারী সবাই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। একজন শিক্ষার্থী যে কেন্দ্রে (একটি) পরীক্ষা দিতে পছন্দ দেবেন, সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষা দিতে পারবেন। কেন্দ্রীয়ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পরিবর্তনে (মাইগ্রেশন) সময় নির্ধারণ করে দেওয়াসহ অন্যান্য সুপারিশের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গতবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিলেও এবার শিক্ষকদের একটি অংশের দ্বিমত আছে। 

অন্যদিকে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ আটটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের বাইরে নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।

সূত্র: প্রথম আলো অনলাইন। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026600360870361