অছাত্রকে রাখতে ৪ শিক্ষার্থীকে বের করে দিলো ছাত্রলীগ

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্যসেন হলে চার শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হলটির সদ্য সাবেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে হলের ৪৫০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে হলটির ৫৩২ নং কক্ষ থেকে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীদের ডেকে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এর জোর করে মুচলেকা নিয়ে হল ছাড়া করা হয় বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এর আগে তারা হলটির প্রাধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। 

ভুক্তভোগীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আল আমীন ও একই সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান। তারা সবাই হলটির ৫৩২ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে জানান, হলটির ৫৩২ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের দর্শন বিভাগের সুমন আহমেদ নামে এক অছাত্র থাকতেন। বিভিন্ন সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রুমের সবাইকে মানসিক টর্চারের মধ্যে রাখতেন। সাম্প্রতিককালে কক্ষের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে ঝামেলা হলে দেখে নেয়ার হুমকি দেন সুমন এবং ১২ ঘণ্টার পর হল ছাড়ার হুমকি দেন। ওই ছাত্ররা তখন বিষয়টি হলের হাউস টিউটরকে জানান। পরে বিষয়টি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানকে জানান সুমন। এর ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল আহাদের মাধ্যমে ওই রুমে অবস্থানরত সব শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডাকেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান। তারপর ৪৫০ নম্বর গেলে আমাদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ঘাটাঘাটি করেন তারা। এর এক পর্যায়ে সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে মারধর করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আলম বাদশা বলেন, দফায় দফায় আমাদের সবাইকে মানসিকভাবে নির্যাতন, শারীরিকভাবে কিল-ঘুষি দেয়া শুরু করে। সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে নিয়ে ওই রুমে সিয়াম রহমান তিনি আমাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এখন পর্যন্ত আমার পিঠে ব্যথা রয়েছে। এভাবে সবাইকে এক এক করে মারধর করেছেন। চড়-থাপ্পর লাথি এবং তার কথা কেনো শুনিনি, সিনিয়রকে কেনো বের করে দিতে চাই এগুলো কথা বারবার নিয়ে এনে তিনি আমাদের টর্চার করেছেন। সেখানে আমরা প্রায় তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ছিলাম। শেষ পর্যায়ে এসে আমাদেরকে জোরপূর্বক মুচলেকা নিতে বাধ্য করে। 

আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, প্রথমে সিয়াম ভাই আলম বাদশা ভাইকে দিয়ে মারধর শুরু করেন এবং আমাদের বলেন তোদের তো অবস্থা খারাপ, তোরা তো শিবির করিস। মোবাইলগুলো জমা নিয়ে ফেসবুকে ঘাটাঘাটি করে কিছুই পায়নি। শুধু পদ্মা সেতু নিয়ে লুৎফরের ভাইয়ের একটি লজিক্যাল ফেসবুক পোস্ট পেয়েছেন। লুৎফর ভাই যতবার ফেসবুক পোস্টটি যতবার লজিং দিতে গেছেন, তিনি নিজের মতো ব্যাখা দিয়ে ততোবার মারধর করেছেন। মারের ধরণ এমন ছিলো কাছে টেনে নিয়ে মাথার চুল ধরে, থাপ্পড়াচ্ছিলেন এবং সেখানে হাত দিয়ে যাচ্ছিল না। এর পরবর্তীতে বুকে লাথি দিয়ে অনেক দূরে চলে গেলে, আবার সেই জায়গায় এনে ফেলা হচ্ছিল।  

তিনি আরো বলেন, পরে জোরপূর্বক আমাদের মুচলেকা নেয়া হয়। হামিদ কারজাই নামে এক ভাই কাঠের বেত দিয়ে আমাকে আঘাত করেন। এছাড়া যখন আমি মুচলেকা লিখতে চাচ্ছিলাম না, তখন সিয়াম ভাই এসে একটি মুচলেকার খসড়া দেয় এবং পালাক্রমে সবাই তা লেখে।

এদিকে ভুক্তভোগীরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তারা সবারই হলটির ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অভিযুক্তরা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি,আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা। 

জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই বলেন, এমন কিছুই ঘটে নি। যেহেতু আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করি, সামনে হলের ক্যান্ডিডেট। তাই আমার ক্লিন ইমেজ নষ্ট করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে।

এদিকে অভিযুক্ত হলটির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানসহ বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায় নি।

সার্বিক বিষয়ে হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, দুপুরে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে হলের সিনিয়র হাউস টিউটর শহীদ কাজী এবং দুই ফ্লোরের দুই হাউস টিউটর মাহমুদুল হাসান ও আরিফুল ইসলামকে নিয়ে ওই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01629114151001