দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : ছিল ধু ধু মরুভূমি। হয়ে গেল সবুজ ঘাসে ঢাকা মরূদ্যান। সৌদি আরবে ঘটেছে এই কাণ্ড। কোনও জাদুবলে নয়, আচমকাও নয়। বৃষ্টির কারণেই প্রকৃতির এই ভোলবদল।
প্রথমটায় স্থানীয় বাসিন্দারা দেখে চমকেই গিয়েছিলেন। মরুভূমির মাঝে সবুজ ঘাসে ঢাকা বিস্তীর্ণ ভূমি। তাতে ফুটে রয়েছে ছোট ছোট ফুল। দেখে অনেকেই বলছেন, প্রকৃতির কী ক্ষমতা, তা স্পষ্ট।
শুধু চোখের আরাম নয়, মরুভূমির মাঝে এই এক টুকরো সবুজ ভূমি গোটা এলাকার বাস্তুতন্ত্রেও বদল এনেছে। মরুভূমিতে এখন চরে বেড়াচ্ছে গবাদি পশুও।
কিন্তু কেনো হঠাৎ এমন হলো? সাম্প্রতিককালে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে ওই মরুভূমিতে। সে কারণে মক্কা ও মদিনার মাঝে মরুভূমির এই অংশ সবুজ হয়ে উঠেছে। বন্ধ্যা জমিতে গজিয়ে উঠেছে ঘাস।
সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলেই এই কাণ্ড হয়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টিই এর কারণ। এমনিতে এই অঞ্চলে বৃষ্টি হয় না। সেখানে অতিবৃষ্টি হওয়ার জন্যই উলটপুরাণ। বৃষ্টির কারণে ভিজেছে মাটি। আর তাতেই জন্মেছে উদ্ভিদ।
এই সবুজ ভূমির ছবি বহু মানুষ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। ছবিতে দেখা গিয়েছে, সবুজ ঘাসে ঢাকা এলাকায় চরে বেড়াচ্ছে উট। নাসার উপগ্রহেও ধরা পড়েছে ছবি।
রুক্ষ জমির মাঝে এই সবুজ চোখে পড়ার মতো। অনেক সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীই এখানে তাঁবু খাটিয়ে থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। অনেকে আবার বলেছেন, এখানে রিসর্ট চালু করা উচিত।
সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ আবার দাবি করেছেন, মুসলিম ধর্মগুরুর আশীর্বাদেই মরুভূমি হয়েছে সবুজ। শতাধিক বছর আগে নাকি ধর্মগুরুরা বলে গিয়েছিলেন এমনটা হতে পারে।
২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ দিক থেকেই এই এলাকা এভাবে সবুজ হয়ে উঠেছে। নভেম্বরে সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চল ছাড়াও উত্তর সীমান্ত লাগোয়া আল-জাওয়াফ, হায়েল, আল-কাশিমে তুমুল বৃষ্টি হয়েছিল। সতর্কতা জারি করেছিল হাওয়া অফিস। তার ফলেই বৃদ্ধি পেয়েছিল সবুজ।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনই এর প্রধান কারণ। সাম্প্রতিক অতীতে তাই বার বার সবুজ হয়ে উঠছে সৌদির মরুভূমি। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতেও এই ঘটনা দেখা গিয়েছিল।
এমনিতেই সৌদি আরব প্রশাসন দেশে সবুজের মাত্রা বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মরুভূমিতে বাঁচে এমন গাছ আরও বেশি করে রোপণ করে মরুভূমির আয়তন কমাতে চাইছে।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রশাসন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মরুভূমিতে বাঁচে এমন ৪৫ কোটি গাছ লাগাবে প্রশাসন।
পাশাপাশি, বনভূমি সংরক্ষণেরও চেষ্টা চলছে। সৌদি আরবে ২৭ লাখ হেক্টর বনভূমি রয়েছে। কোনোভাবেই যেনো সেগুলিকে মরুভূমি গ্রাস করতে না পারে, সে জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সৌদি আরবে ১৫টি এলাকা তাদের জীববৈচিত্রের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তার মধ্যে ১২টি স্থলভাগে এবং তিনটি সমুদ্রের নীচে রয়েছে। দিনরাত চেষ্টা করে সৌদি প্রশাসন যখন বনভূমির আয়তন বৃদ্ধি করছে, তখনই মরুভূমির মাঝে তৈরি হলো মরূদ্যান।
সূত্র: আনন্দবাজার