স্কুলের আর্থিক অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধভাবে ট্রাস্ট গঠনের অপচেষ্টা ও অভিভাবকদের হয়রানির অভিযোগ তুলে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেনকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে অভিভাবক ফোরাম।
গতকাল রোববার ২৯ জানুয়ারি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অভিভাবকদের এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের আহবায়ক মোঃ সাইফুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সদস্য সচিব লিয়াকত আলী, আব্দুস সালিম পুলক, একলিমুর রেজা, ফারজানা আলম প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা বলেন, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ অবৈধভাবে ক্ষমতার মসনদে বসে আছেন। তার চাকরির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলেও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো -২০১৮ এর ১১.৬ বিধি লঙ্ঘন করে তাকে ৩ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনেও তাকে অবৈধ ঘোষণা করা হলেও কর্তৃপক্ষ সেসব আমলে নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে মরহুম নুর মোহাম্মদ মিয়া ঢাকার মিরপুরে নিজের পৈত্রিক জমি দান করে মনিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টিতে আরো জমি দান করেন স্থানীয় লায়লা বেগম। তাঁকে বিদ্যালয়ে আয়ার চাকরি দেয়া হয়। শেখ সফদার আলীর পরিচালনায় বিদ্যালয়টি কয়েকবার জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ মনোনীত হয়। সুনাম বৃদ্ধির ফলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিদ্যালয়টি নিজের অর্থে ও সরকারি জমি অনুদান পেয়ে কয়েকটি ক্যাম্পাস ও কলেজে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এর শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় চল্লিশ হাজার। বার্ষিক আয়ও শতকোটি টাকার বেশি।
কলেজটির সহকারী শিক্ষক মোঃ ফরহাদ হোসেন সাধারণ শিক্ষক থেকে নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করলে সরকার তাকে এমপিওচ্যূত করে। তারপর শুরু হয় তার নানা অপকৌশল। স্থানীয় সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারকে ভুল বুঝিয়ে তার নিজের ও তার মেয়েসহ আরো কয়েকজনের নামে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজকে ট্রাস্ট করার অপচেষ্টা চালান তিনি। কিন্তু বিদ্যালয়টির এমপিও চালু থাকা, জমির মালিক সরকার, নুর মোহাম্মদ মিয়া ও লায়লা বেগম হওয়ায় তাদের সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু এ কে এম দেলোয়ার হোসেন নামে জনৈক ব্যক্তি বিদ্যালয়ে কয়েকটি সিলিং ফ্যান দান করে নিজের নামে টাস্ট করার জন্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, ধূর্ত ফরহাদ হোসেন শিক্ষকদের এমপিও শিটে সই করা বন্ধ করে দেন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু তাদের নিজেদের পছন্দমত ব্যক্তিকে মাঝে মাঝে এমপিওর টাকা তুলতে দেন। এছাড়া তিনি অনেকের বেতন কমিয়ে দিয়েছেন।
অভিভাবকরা আরো বলেন, বিদ্যালয়ের ফলাফল আজ তলানিতে নেমে গেছে। ৮৮ শতাংশ এ প্লাস পাওয়া প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে এ প্লাসের সংখ্যা ৩৮ তেকে ৪০ শতাংশ। অর্থ গ্রহণ করে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়াতে ফলাফলে এ বিপরর্যয়। ফরহাদের কয়েকজন আত্মীয় শিক্ষক রয়েছেন, যাদের কোনো উপযুক্ত সার্ফিকেটও নেই। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ অধ্যক্ষ ফরহাদের দৌরাত্ম্য থেকে মনিপুর বিদ্যালয়কে মুক্ত করা হোক।