অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষাডটকম, রাজশাহী |

রাজশাহীর মোহনপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ আতাউর রহমান আজ বৃহস্পতিবার অবসরে যাচ্ছেন। তবে অবসরের আগে তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তাঁর ভাই, ভাগনে, বন্ধুর ছেলেও রয়েছেন। চাকরি পেয়েছেন অধ্যক্ষের সহকর্মীদের ঘনিষ্ঠজনেরাও। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে ১৫টি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও চাকরি দেওয়া হয়েছে ১৮ জনকে।

গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে দ্রুতই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করা হয়। অবসরে যাওয়ার আগমুহূর্তে অধ্যক্ষ আতাউরের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগে স্বজনপ্রীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক ও কর্মচারীরা। আগে বদলিসহ নানা রকম শাস্তির ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অ্যাসেট প্রকল্পে লিড ট্রেনার, সহকারী ট্রেনার, হিসাবরক্ষক ও ওয়ার্কশপ অ্যাটেনডেন্টের ১৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে লিড ট্রেনার ও সহকারী ট্রেনার পদ দুটির বিপরীতে ‘অতিথি প্রশিক্ষক’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোনো রকম লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে গত ৫ মে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নিয়েই নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত পদের চেয়ে আরও তিনটি অতিরিক্ত পদে নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ। এর মধ্যে অতিথি প্রশিক্ষক পদে ১০ জন, ল্যাব সহকারী পদে ৫ জন এবং হিসাবরক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর ও স্টোরকিপার পদের প্রতিটিতে একজন করে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

সূত্র জানায়, কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে অতিথি প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ পান অধ্যক্ষ আতাউরের ভাগনে আবু সুফিয়ান মো. মোস্তাফিজ-উল হক। একই ট্রেডে নিয়োগ পাওয়া রেজওয়ানুল হক আবির রংপুর টিটিসির অধ্যক্ষের ছেলে। গ্রাফিকস ডিজাইন ট্রেডে নিয়োগ পাওয়া প্রশিক্ষক আসিফ আহমেদ সৈকত অধ্যক্ষ আতাউরের এক বন্ধুর ভাতিজা।

মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়া শামীম হোসেন অধ্যক্ষ আতাউরের আপন চাচাতো ভাই। শামীম হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে অসামঞ্জস্য হলেও তাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন অধ্যক্ষ। প্রশিক্ষণ দেওয়ার অদক্ষতার কারণে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণার্থীরা তাঁর ক্লাস বর্জন করেন। গত ৭ জুলাই প্রকল্পের শর্ট কোর্সের উপপ্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী বি এম শরীফুল ইসলাম মোহনপুর টিটিসি পরিদর্শনে গিয়ে শামিম হোসেনকে প্রশ্ন করেন, ‘প্রথম সাইকেলের কোন লেভেল শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে?’ শামিম উত্তর দিতে না পারার কারণে তাঁকে চাকরি থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি। 

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত খণ্ডকালীন ইনস্ট্রাক্টর আপেল মাহমুদ ও অধ্যক্ষ আতাউর রহমান একসময় শরীয়তপুর টিটিসিতে কর্মরত ছিলেন। আপেল মাহমুদের সুপারিশে আসমানি খাতুন ও ইমাম হোসেন নামের দুজনকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশিক্ষক হিসেবে। সিভিল কনস্ট্রাকশন ট্রেডে নিয়োগ পাওয়া ননী গোপাল বিশ্বাস রাজশাহী টিটিসিতে আতাউর রহমানের সহকর্মী ছিলেন।

রাজশাহী টিটিসির অধ্যক্ষ ইমদাদুল হকের ভাগনে মাহাবুর রহমানকেও ইলেকট্রিক্যাল ট্রেডের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন আতাউর। এ ছাড়া স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদের সুপারিশে সাইফুদ্দিন শেখ নামের আরেকজনকে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেন।

রাজশাহী টিটিসির অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষক নিজাম উদ্দিনকে মোহনপুর টিটিসিতে একই পদে, আব্দুল জলিল নামের একজনকে স্টোরকিপার এবং সুসম্পর্কের খাতিরে এক নারীকে কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ। এ ছাড়া প্রভাবশালীদের সুপারিশেই প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচনের অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অধ্যক্ষ আতাউরের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। 

জানতে চাইলে অধ্যক্ষ আতাউর স্বীকার করেন, প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া শামিম তাঁর চাচাতো ভাই। তবে নিয়োগ পাওয়া অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ১৫টি পদের বিপরীতে ১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ীই হয়েছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ঘেরাও শিক্ষার্থীদের ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha ঘুষকাণ্ডে গণধোলাই খাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেই কর্মকর্তা বললেন সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা - dainik shiksha জাবি ছা*ত্রীর মৃত্যু: বিচারের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার - dainik shiksha পাঁচ বিসিএসে ১৮ হাজার প্রার্থী নিয়োগ দেবে সরকার পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ - dainik shiksha পবিপ্রবিতে র‍্যা*গিংয়ে হাসপাতালে ৩ শিক্ষার্থী, বহি*স্কার ৭ কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে - dainik shiksha কওমি-আলিয়া মাদ্রাসার ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002910852432251