ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের ব্যাংক হিসাব থেকে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ছাড়া টাকা উত্তোলনের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সাতজনের নামে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে মামলাটি করেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান। পরে আদালত মামলাটি দুনীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঝিনাইদহকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে আগামী ২০ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
মামলার আসামিরা হলেন–কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোজ কান্তি বিশ্বাস, প্রধান হিসাব রক্ষক রজব আলী, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এ বি এম আহসানুল কবির, ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকার গুলশান অ্যাভিনিউর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেম উদ্দিন, প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতার হোসেন, খুলনা জোনের জোনাল হেড সাইদুর রহমান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড কালীগঞ্জ শাখায় সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের চলতি হিসাব নম্বর ৫৮৫৮ এবং ৬১২৭ থেকে চেকের মাধ্যমে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ছাড়া ছয় লাখ ৮০ হাজার ২১ টাকা উত্তোলন করেন অভিযুক্ত সাতজন। যেটি পরে মোবাইলে আসা এসএমএস থেকে ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কলেজের অধ্যক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, কলেজের শিক্ষক মনোজ কান্তিসহ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে এই অর্থ উত্তোলন করা হয়। তারা পুনরায় ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকা আত্মসাৎ করতে পারে। তাই এ ব্যাপারে তদন্ত করে সঠিক কারণ নির্ধারণ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতের বিচারক মো. নাজিমুদ্দৌলা বাদীর নালিশি দরখাস্তের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারামতে জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এরপর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপপরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঝিনাইদহকে নির্দেশ প্রদান করেন।
মামলার বাদী সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কী কারণে এবং কেন আমার স্বাক্ষর ছাড়া অর্থ উত্তোলন করা হল সেটি আমি জানি না। অভিযুক্তরা নিজেদের যোগসাজশে এমনটি করেছে। আমার স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ উত্তোলন করতে হলে অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশ লাগবে। যেটা অভিযুক্তদের কাছে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজটি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্ট সরকারি করা হয়। পরে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মণ্ডল কলেজের সব ব্যাংক হিসাব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পত্রাদেশ মোতাবেক নিজের স্বাক্ষর প্রতিস্থাপন করেন।
কিন্তু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগস্টের পর সরকারি করণের পর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে সব ব্যক্তির স্বাক্ষর এবং যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষরে কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তার স্বপক্ষের শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোন পত্রাদেশ নেই।’
অধ্যক্ষ বলেন, ‘ওই সময় থেকে এই টাকা উত্তোলন হয়েছে কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা, সাদিয়া জেরিন এবং বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ রূপে সরকারি অর্থ আত্মসাতের শামিল। এ বিষয়টিও আদালত তদন্ত করবে এমনটিই আমার প্রত্যাশা।’
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘কলেজের যে অর্থ উত্তোলন হয়েছে এটা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই করা হয়েছে। এই টাকা পরীক্ষার ফিসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে। তবে, অধ্যক্ষ হয়তো মনে করতে পারে সঠিক নিয়মে টাকা উত্তোলন হয়নি বা সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়নি। এ জন্য অধ্যক্ষ এমনটি করতে পারে। তবে বিষয়টি তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।’